কবি আহমেদ খালেদ কায়সারের প্রয়াণে শোকগাথা

156

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

কবি আহমেদ খালেদ কায়সার চলে গেছেন।আমাদের জীবনে মৃত্যুই এখন স্বাভাবিক ঘটনা, বেঁচে থাকাই অস্বাভাবিক। করোনার মড়ক লাগার পর বাংলাদেশে এখন প্রতিদিনই ত্রিশোর্ধ মানুষ মারা যাচ্ছে।কোন কোনদিন এ সংখ্যা পঞ্চাশও ছুঁয়ে যাচ্ছে। সব মৃত্যুই বেদনার। কায়সারের মৃত্যুর বেদনা আরো বেশি করে ছুঁয়ে গেল। কেননা কায়সার একজন কবি। তাঁর অনেক পরিচয় দেয়া যেত। যেমন তিনি মহামহিম আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের নাতি, মহাপন্ডিত ড. আহমদ শরীফের ভ্রাতুস্পুত্র, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুর করিমের চাচাতো ভাই, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউস, নৌবাহিনীর কমোডর জোবাইয়ের আহমদ ও নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারের বড় ভাই। কিন্তু তাঁর এতসব বিশেষ পরিচয়ের মধ্যে আমি কবি পরিচয়টাকেই বড় মনে করি। কারণ কবিরা বিধাতার অত্যুৎকৃষ্ট সৃষ্টি। ইচ্ছা করলেও সবাই কবি হতে পারেন না। সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক প্লেটো তাঁর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের স্থান না দিলেও কবিকে আমি এক মহৎ শ্রেণীভুক্ত মনুষ্য বলিয়া মান্য করি। কবির বিষ্ময়কর কল্পনাশক্তি ও অত্যাশ্চর্য সৃজন ক্ষমতায় শব্দের এমন সব উদ্ভাস আমাদের হৃদয়ে অলৌকিক দোলা দিয়ে যায় যে শব্দের এই নিপুণ কারিগরির জন্য কবিকে উত্তমর্ণ হিসেবে মানতে হয়।
আমি নিজে কবি হতে পারিনি বলে আমাদের সমবয়সী অথবা কিছু বড় ছোট বন্ধুদের মধ্যে যারা কবিখ্যাতি অর্জন করেছেন, তাদেরকে আমি হিংসা করি। তাদের কিছু নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করছি, আশা করি তা অপ্রাসঙ্গিক মনে হবে না। তারা হচ্ছেন। প্রয়াত আহমেদ খালেদ কায়সার, সাথী দাশ, আকাশ মাহমুদ, বিমল গুহ, নিতাই সেন, আশীস সেন, অধ্যাপক ফাউজুল কবির, অধ্যাপক আনন্দ মোহন রক্ষিত, প্রয়াত মৃদুল গুহ,রবীন ঘোষ, কমলেশ দাশ গুপ্ত, শিশির দত্ত, অভীক ওসমান, অমলেন্দু দাশ, প্রদীপ খাস্তগীর, আবসার হাবীব। অনতি পরবর্তী কবিরা হচ্ছেন- বিশ্বজিৎ চৌধুরী, আসাদ মান্নান, মিনার মনসুর, আবু তাহের মুহম্মদ, ওমর কায়সার, খালিদ আহসান, এজাজ ইউসুফী, হাফিজ রশিদ খান, শাহিদ আনোয়ার, আবু মুসা চৌধুরী, অজয় রতন বড়ুয়া, ইউসুফ মুহম্মদ, জ্যোর্তিময় নন্দী, ইব্রাহিম আজাদ, অধুনা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অজয় দাশগুপ্ত, ফারুক ইকবাল, প্রয়াত অরুন সেন, অধ্যাপক শেলিনা শেলী, শরীফা বুলবুল লাকী, হোসেন শহীদ। কংকন নন্দী, আলতাফ হোসেন, ময়ুখ চৌধুরী, আবুল মোমেন, স্বপন দত্ত, খুরশিদ আনোয়ার, তপন জ্যোতি বড়ুয়া, প্রয়াত সুনীল নাথ আমাদের অগ্রজ, সে কারণে তাদের নাম পরে উল্লেখ করলাম।
বলেছি কায়সার আমার বন্ধু ছিলেন। কিন্তু এক সময় সংস্কৃতিচর্চায় আমার অধিক সময় কাটানোর কারণে তার অনুজ আহমেদ ইকবাল হায়দারের সাথে আমার নৈকট্য স্থাপিত হয়। তাদের বাসায় অনেকদিন গিয়েছি। আমরা একই উপজেলা পটিয়ার বাসিন্দা। তাদের পিতা সাহিত্য বিশারদের ভ্রাতুস্পুত্র কায়কোবাদ আহমেদ চট্টগ্রামকে একটি আলোকিত পরিবার উপাহার দিয়েছেন, তাঁর ছয় পুত্রই উচ্চ শিক্ষিত এবং কৃতী।
কায়সার চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগ করতেন। সেই সূত্রে তাঁর সাথে আমার আদর্শিক সম্পর্ক ছিল। চট্টগ্রাম কলেজের ভিপি প্রয়াত জালালুদ্দিন আহমদের অনুরাগী ছিলেন কায়সার। সড়ক দূর্ঘটনায় জালাল ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর পর আমাদের নেতা ইউসুফ ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা তাঁর স্মরণে একটি নাগরিক শোকসভার আয়োজন করেছিলাম।সে সময় একটি স্মারক পুস্তিকাও প্রকাশ করি যাতে কায়সার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি লেখাও দিয়েছিলেন।
লেখক : সাংবাদিক