কদর বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মী-ভোটারদের

56

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৯ দিন। প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে। প্রার্থীরা ছুটছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নির্বাচনকে ঘিরে কদর বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের। যারা শত চেষ্টা করেও এতদিন এমপি বা নেতাদের কাছে ঘেঁষতে পারেননি, তারাই যাচ্ছেন কর্মী-ভোটারদের কাছে। এতদিন তারা পাত্তা না দিলেও এবার তারা নিজেরাই পাত্তা পচ্ছেন না।
অনেকে এটাকে ‘মৌসুমি কদর’ বলে আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, ভোটের পর আগের চিত্রই দেখা যাবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলেই একই চিত্র বলে অভিযোগ।
আগামি ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থীরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন। বাসা-বাড়িতে শত শত নেতাকর্মীর ভিড়। কাউকে নিরাশ করছেন না। সবার সাথেই কথা বলছেন, কুশলাদি জানছেন। এমনকি আপ্যায়নও করছেন। এছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতেও যাচ্ছেন তারা। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। সিনিয়র নেতারাও তৃণমূল নেতাকর্মীদের খবর নিচ্ছেন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। প্রার্থী ও নেতারা তৃণমূলদের আপন করে নিচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিগত ৫ বছরে অনেক এমপি-নেতার কাছে ঘেঁষতে পারেননি। কিছু সুবিধাভোগী নেতা ঘিরে থাকত তাদের। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দেখা সাক্ষাৎ করার কোন সুযোগ ছিল না। অভাব-অভিযোগ জানানোর কোন সুযোগও পাননি তারা। কোন ধরনের মূল্যায়নও ছিল না তাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল অনেকের মাঝে।
কিন্তু ভোট আসায় বেশ কদর বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তারাই প্রার্থীদের ‘প্রাণ’ হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিনই ডাক পড়ছে তাদের। এমনকি বাড়িতে গিয়েও দেখা করছেন। কুশলাদি জানার চেষ্টা করছেন। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন না তা নয়। অনেক এমপি তৃণমূল নেতাদের প্রাধান্য দিয়েছেন। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ দিয়ে সমস্যা সমাধনের চেষ্টা করেছেন।
তৃণমূলের এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার এমপিকে ৫ বছরে একদিনের জন্যও দেখিনি। মনে করেছিলেন আমাদের লাগবে না। আমার মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও দল যেহেতু প্রার্থী দিয়েছে আমরা কাজ করছি।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ জনসম্পৃক্ত একটি রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের এমপি নেতারা সবসময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তদের অভাব-অভিযোগ শুনে সমাধানের চেষ্টা চালান। তৃণমূলই তো দলের শক্তি। তাদের কাছ থেকে সরে গেলেতো আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে সার্বক্ষণিক তৃণমূলে যোগাযোগ রক্ষা করার।
রাউজান থেকে নির্বাচিত এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়েইতো আমরা রাজনীতি করি। তাদের মূল্যায়ন করব না, এটা কখনো হতে পারে না। বিগত ১০ বছর ধরে আমি প্রতিটি নেতাকর্মীর খবরাখবর নিয়েছি। যারা সমস্যা নিয়ে এসেছেন সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। প্রতিটি এলাকায় গিয়েছি।
পটিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী বলেন, আমার বেলায় এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আমি প্রতিটি কর্মীর খোঁজ নিয়েছি। ভোট খুঁজতে নয়, সুখ-দুঃখে তাদের সাথে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব।
কোতোয়ালী তানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিগত ৫ বছর আমাদের এমপি জিয়াউদ্দিন বাবলু কারো খবর নেননি। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সব নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন করেন।
বিএনপি’র ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ রয়েছে। অনেক এমপি প্রার্থী ও নেতাদের দেখা পায়নি তৃণমূল নেতাকর্মীরা। শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন ছিলেন ঢাকামুখি। মাঝে মধ্যে চট্টগ্রাম এলেও গুটিকয় নেতা তাদের ঘিরে রাখতেন বিধায় তৃণমূল তাদের সাক্ষাৎ পায়নি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের খোঁজও নেননি অনেক নেতা।
এসব প্রার্থী ও নেতাদের কাছেও বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কদর। এবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঘরে-ঘরে যাচ্ছেন তারা। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছেন তারা। পরিবারের সমস্যাসহ সবকিছু জানার চেষ্টা করছেন। তারা নারী কর্মীদের খোঁজও নিচ্ছেন নিয়মিত। প্রার্থীরা তাদের সাথে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সবসময় মূল্যায়ন করা হয়। আমি প্রতিটি এলাকায় গিয়ে খবরাখবর নিয়েছি। নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের সুখ-দুঃখে ছিলাম।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের কদরও বেড়েছে। ঘরে ঘরে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। বাড়িতে বা রাস্তায় ভোটারের সাথে কোলাকুলি করছেন। তাদের কুশলাদি জানার চেষ্টা করছেন। তাঁকে ভোট দিয়ে এমপি বানালে সবসময় পাশে থাকার প্রতিশ্রæতিও দিচ্ছেন।
প্রার্থী ও নেতারা প্রতিটি এলাকায় ছুটছেন। বিলে-খালেও নামছেন ভোটারের সঙ্গে দেখা করতে। এমনকি রান্না ঘরেও ঢুকে পড়ছেন। নারীদের মা-বোন ডেকে ভোট প্রার্থনা করছেন।