কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা

41

নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলীর পাইকারি বাজারে গত দুই সপ্তাহেও চালের দাম কমেনি। অথচ খাদ্যমন্ত্রী ১০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে এনে ১৫ দিন পূর্বের দামে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা। তারা চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে চালের দাম কমেনি বলে জানান। যার কারণে গত দুই সপ্তাহে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার এখন আমদানির দিকে যাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে। আবার এটাও চিন্তা করতে হবে যে, কৃষকরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না। এসব বিষয় চিন্তা করে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
অভিযোগ উঠেছে, উত্তরবঙ্গের মিল মালিকরা চট্টগ্রামের বড় বড় দোকানে তাদের নিজস্ব একজন প্রতিনিধি রাখেন, যাদের মাধ্যমে বাজারে চাহিদার বিষয়টি মিল মালিকদের জানাতে পারেন। সে অনুযায়ী চট্টগ্রামে যদি দৈনিক ৫০ টনের চাহিদা থাকে, তবে মিল মালিকরা পাঠাবে ৩০ টন আর ২০ টন না পাঠিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে এবং বলবে চালের বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা না বাড়লে আমরা চাল দিবো না। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে চাল কিনতে হয়।
চট্টগ্রামের আড়তদাররা বলছেন, মোকামে যদি দাম কমানো না হয়, তবে এখানেও দাম কমার সুযোগ নেই।
গতকাল সোমবার নগরীর বৃহত্তম পাইকারী বাজার পাহাড়তলী ও চাক্তাই চালের পাইকারী বাজার ঘুরে জানা গেছে, ইরি মোটা (৫০ কেজির বস্তা) ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ১০০ টাকা, বেতি আতপ ১০০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে (৫০ কেজির বস্তা) ২ হাজার ৩৫০ টাকায়, মিনিকেট আতপ বস্তপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, শম্পা কাটারি বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায় এবং আটাশ বেতি ৫০ টাকা দাম কমে ২ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব চাল চট্টগ্রামের মানুষের চাহিদা বেশি।
এছাড়া স্বর্ণা সিদ্ধ ১৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০, নাজিরশাইল সিদ্ধ (৫০ কেজির বস্তা) ২০০ টাকা বেড়ে আগে ২ হাজার ৭০০ টাকায়, দিনাজপুরী পাইজাম সিদ্ধ ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকায়, মোটা সিদ্ধ চাল ১০০ টাকা বেড়ে এখন ২ হাজার ৫০০ টাকায় এবং চিনিগুড়া ও কাটারিভোগ চালের বস্তা মানভেদে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তবে চিনিগুড়া ও কাটারিভোগ চালের দাম আগের মতই রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চালকল মালিকরা বস্তা প্রতি ২০ টাকা বাড়ালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা তা ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা বাড়িয়ে দেন। চালের পাইকারী বাজারের প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়ে। ফলে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ফেলেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।
গ্রাহক মাসুদুর রহমান জানান, আগে একবস্তা চাল কিনতাম দেড় হাজার টাকা দিয়ে কিন্তু এখন সে বস্তা কিনতে হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। কিন্তু সে অনুপাতে আমাদের আয় বাড়েনি। আগে যে আয় ছিল তা এখনো রয়েছে। চাল নিয়ে নিশ্চয় কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে মনে করি।
পাহাড়তলী পাইকারী বাজারের বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী যেভাবে বলেছিলেন সেভাবে মোকামরা কথা রাখেননি। তাই বাজারে চালের দামও কমেনি। তারা যদি চাহিদামত চাল পাঠান, তবে চালের সংকট গুছিয়ে দামও কমে আসবে। এছাড়া সরকার এখন আমদানির দিকে যাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে। আবার কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমাদের কোন হাত নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের মিলওয়ালারা একটি সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
চাক্তাই রাইচ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্ত দাশগুপ্ত পূর্বদেশকে বলেন, চালের দাম বাড়তি হলেও বেচাবিক্রি কম। আবার অন্যদিকে নতুন আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজার নি¤œমুখি হবে। বর্তমানে চাক্তাই ও পাহাড়তলী পর্যাপ্ত চাল রয়েছে।