কথাশিল্পী, কবি আল মাহমুদকে জানার অনন্য আয়োজন সাগরকন্যা আবদুল্লাহ মজুমদারকথাশিল্পী, কবি আল মাহমুদকে জানার অনন্য আয়োজন সাগরকন্যা

194

যেখানে সাহিত্য সেখানেই যেনো কথাশিল্পী আল মাহমুদের স্পর্শ। বাংলা সাহিত্যে মাহমুদ চর্চা ছাড়া কবিতা এখন ভাবা যায় না। কবিকে নিয়ে কাজ করছে অনেক তরুন লেখক। গবেষণাও করছে। করছে অনুস্মরণ, অনুকরণ ও। সত্যিকারার্থে আল মাহমুদকে জানা একজন লেখকের জন্য অনেকটাই প্রয়োজনীয় মনে করি। সে জানার পরিধি বাড়াতে বা সমৃদ্ধ করতে সাগরকন্যার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো ছাড়া কিছু নেই।
শিল্প সাহিত্যের ছোট কাগজ সাগরকন্যা তরুণদের ভাবনায় কবি আল মাহমুদকে নিয়ে এই সংখ্যাটি রচিত হয়। আল মাহমুদের জীবদ্দশায় নানা কাগজ বিশেষ সংখ্যা করেছে, মৃত্যুর পরেও জারি আছে এই ধারা। কবি আল মাহমুদের ৮৪তম জন্মদিনে সাগরকন্যার এবারের আয়োজন। সাগর কন্যার এই সংখ্যায় আল মাহমুদের বিশাল প্রভাব বিস্তারি সৃজনরাজ্যের নানা দিক কবিতা -গল্প -উপন্যাস- প্রবন্ধ নিয়ে তরুণদের আলোচনা-সমালোচনা আমাদের অবাক করেছে।
সাহিত্যের দিকপাল আল মাহমুদকে নিয়ে লিখেছেন প্রতিভাবান আরো ৯৪ জন তরুণ লেখক। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ সাক্ষাৎকারসহ আল মাহমুদের জীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তুলেছেন লেখনীর মাধ্যমে। শব্দ বুননের নিখুঁত কারিগর, শিল্পস্রষ্টা, বিশ্বাসী কবি, কবিতায় প্রেম ও নারী, সোনালী কাবিনের কবি, বিশ্বাসের এক কঠিন ধ্বনি’র কবি, বহুবর্ণিল পথে ক্লান্তিহীন মুসাফির, আধুনিক চিত্রকল্পের কবি, আল মাহমুদের ভুল থাকতে পারে; কিন্তু অপরাধ নেই, মুখোশবিহীন আল মাহমুদ, সত্যের সাহসী সৈনিক, ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে কবি আল মাহমুদকে তরুণ লেখকেরা লেখনীতে উপস্থাপন করেছেন সাগরকন্যার আল মাহমুদ সংখ্যায়।
মোহাম্মদ আযম এর ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছ ও, আল মাহমুদের কাব্যিক প্রকল্প পড়ে আল মাহমুদের সনেট সম্পর্কেও জানা যায়। অরণ্য আপনও সোনালী কাবিনের বেশকিছু তথ্য নিপূণভাবে তুলে ধরেছেন। জব্বার আল নাঈম ও চমৎকার লিখেছেন সোনালী কাবিন বাংলা কবিতার সিগনেচারে। সময়ের তুখোড় লেখক ইলিয়াস বাবরের লেখা আল মাহমুদ ও তাঁর গল্পের সাহসী নারীরা নজর কাড়ে। বলা যায় কবির বেশ জানা-অজানা তথ্যের বেশকিছুই উঠে এসেছে বিভিন্ন ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে।
এছাড়াও সাগরকন্যায় ৭টি সাক্ষাতকার রয়েছে কবির। সাক্ষাতকারে ফুটে এসেছে অজানা অনেক তথ্য যেমন কবির প্রকৃত নাম মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ, কবির এক নাতনী আছে যে লিখে দিতো কবি যা মুখ দিয়ে বলতো। আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কলকাতায় থেকেও। নির্মিত হয়েছে নাটক, চলচ্চিত্রও। রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে তারা আমাকে খাটো করেছে… এমন অনেক তথ্য। সাক্ষাতকারগুলো নিয়েছেন যথাক্রমে অনার্য মুর্শিদ, আমির সোহেল, আফসার নিজাম, আমিরুল মোমেনীন মানিক, নাজমুস সায়াদাত, পলিয়ার ওয়াহিদ, রনি অধিকারী। এছাড়াও কবি আল মাহমুদের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লেখার অনুবাদ করেছেন অনুবাদক গোলাম সারোয়ার পেয়ারু, ফারজানা রহমান শিমু ও শফিক মোর্শেদ।
কবি ও ব্যাংকার মোস্তফা হায়দারের সম্পাদনায় তরুমন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত আল মাহমুদ সংখ্যায় তরুণদের পাশাপাশি বয়সে তরুণ অথচ দীর্ঘদিন লেখালেখি করছেন এমন অনেক লেখকও লিখেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আতিক হেলাল, মঈন মুরসালিন, রফিকুজ্জামান রণি, সাহিদা সাম্য লীনা, রহিমা আক্তার মৌ, ফারজানা রহমান শিমু, মোস্তফা হায়দার, সাজিদ মোহন, সৌম্য সালেক। তরুণ লেখকদের মধ্যে যাদের নাম না বললেই নয় অনার্য আমিন, আখতারুল ইসলাম, আরমানউজ্জামান, ওসমান মাহমুদ, জনি হোসেন কাব্য, নাসিমা হক মুক্তা, প্রদীপ প্রোজ্জ্বল, মাহদী হাসান, মাহমুদ নোমান, মীম মিজান, রাসেল রায়হান, রুদ্র সানী, শামীম খান যুবরাজ, সাজিদ মোহন, সোহেল বীরসহ আরো অনেকে।
সাগরকন্যার আল মাহমুদ সংখ্যাটি পাঠে নিঃসন্দেহে জানা যাবে কবির জীবন ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে। জানা যাবে ব্যক্তি আল মাহমুদ কতটা কাছাকাছি ছিলেন মানুষের হৃদয়ের। সাগরকন্যার এমন সৃষ্টিশীল প্রকাশনা অব্যহত থাকুক। আগামীতে অন্যকোনো কথাশিল্পী বা সাহিত্যের দিকপালকে তুলে ধরবেন, সে প্রত্যাশা।
আলফা ডিজাইন থেকে মুদ্রিত সাগরকন্যার আল মাহমুদ সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন আলমগীর জুয়েল, শিল্পসজ্জায় আমিনুল ইসলাম রাকিব। তিনশত আটষট্টি পৃষ্ঠার এ বইটির দাম রাখা হয়েছে তিনশত টাকা।