কঠোর নিরাপত্তাবলয় মাঠে নেমেছে পুলিশ

28

সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজ শুক্রবার থেকে মহাধুমধামে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। আজ মহাষষ্ঠী। পাঁচদিন ধরে চলবে এ উৎসব। লাখ লাখ হিন্দু নর-নারী এ উৎসবে শামিল হবেন। শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমসহ অন্য ধর্মাবলম্বিরাও ঘুরে বেড়াবে এ মন্ডপ থেকে অন্য মন্ডপে। এদিকে পূজাকে ঘিরে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে টহল দিতে শুরু করেছে র‌্যাব-পুলিশে একাধিক টিম। পুলিশ বলছে, নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঝুঁকি বা হুমকির কোনো তথ্য নেই। পূজার ৫ দিন সকল প্রকার মদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পঞ্জিকা মতে, ৪ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ৬ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা এবং ৭ অক্টোবর মহানবমী শেষে ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমী এবং প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব।
দেখা যায়, পূজা উপলক্ষে প্রতিটি মন্ডপকে অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে। লাইটিং করা হয়েছে নানা রঙে। আজ থেকে দেখা যাবে আলোর ঝলকানি। মন্ডপের কয়েকশ’ গজ দূর থেকে লাগানো হয়েছে লাইট।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নগরী ও জেলায় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা ৫ দিন ধরে অব্যাহত থাকবে।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনে সকল ব্যবস্থা নিয়েছে নগর পুলিশ। নগরীর মন্ডপগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ। সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে তিন জন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আট জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মন্ডপে দুই জন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে চার জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি থানা এলাকায় একজন করে সহকারী কমিশনারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এচাড়া প্রতি জোনে একজন করে অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করবেন।
সূত্র জানায়, পূজাকে ঘিরে যাতে কেউ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা গুজব ছড়াতে না পারে এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে। কেউ চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান বৃহস্পতিবার পূর্বদেশকে বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব যাতে নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে সেজন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারো মধ্যে কোন প্রকার সংশয় থাকার কোনো কারণ নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা বিনষ্টের সুযোগ কেউ পাবে না। তিনি বলেন, কোনো প্রকার ঝুঁকি বা হুমকির তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পূজা চলাকালে পাঁচদিন সকল প্রকার মদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৈধ দোকানেও মদ বিক্রি করা যাবে না। ইতোমধ্যে বিষয়টি দোকান মালিকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বারগুলোও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি মন্ডপে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। অধিক গুরুপূর্ণ মন্ডপে দুইজন, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ মন্ডপে একজন করে পুলিশ সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে। দ্বিতীয় স্তরে পাঁচ থেকে সাতটি মন্ডপ নিয়ে একটি টিম দায়িত্বে থাকবে, যার মধ্যে একজন এসআই ও তিনজন কনস্টেবল থাকবেন। তৃতীয় স্তরে পুলিশ পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে টিম থাকবে, যারা পিকআপ অথবা মাইক্রোবাসে টহল দেবেন। চতুর্থ স্তরে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপাররা। সর্বশেষ স্তরে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশেষ ফোর্স এবং গোয়েন্দা ও বিশেষ শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় টিম থাকবে সার্বিক তদারকির দায়িত্বে।
পুলিশ জানায়, জেলায় প্রায় ৩০০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ২৭০০ ফোর্স জেলা পুলিশের এবং বাকি ফোর্স রেঞ্জের। পুলিশের বাইরে জেলায় ১৮ হাজার ২৪০ জন আনসার সদস্য বিভিন্ন মন্ডপে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করবে।
এ প্রসঙ্গে ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বৃহস্পতিবার পূর্বদেশকে বলেন, নিরাপত্তায় কোন ধরনের ঘাটতি নেই। নির্বিঘ্নে যাতে এ উৎসব উদযাপন করতে পারে তার সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবার কোন প্রকার ঝুঁকি নাই। সেদিকে আমরা সতর্ক রয়েছি।
জেলা পুলিশও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর কড়া নজরদারি রাখবে। যাতে কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে নজর রাখার জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে। কেউ চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ : শারদীয় দুর্গাপূজায় চারদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা। বৃহস্পতিবার সকালে নগরের প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান পরিষদের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ পালিত, সুমন দে, কল্লোল সেন, অলক মহাজন, উত্তম শর্মা, বিপুল দত্ত প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে অসীম কুমার দেব বলেন, এ বছর জেলার ১৫টি উপজেলায় সর্বজনীন ১ হাজার ৫১৬টি ও পারিবারিক ৩৫৯টিসহ মোট ১ হাজার ৮৭৫টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাঁচদিনের এই দুর্গোৎসবই হিন্দু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। অথচ এত বড় উৎসবে সরকারি ছুটি শুধু একদিন।
উত্তর জেলা : সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করা, শারদীয় দুর্গাপূজায় ৪ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা, দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ।
তিনি বলেন, উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২০ বছর ধরে উত্তর চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলা ও ৯টি থানা এলাকায় পূজা পরিষদের সব কর্মকন্ড পরিচালিত হচ্ছে। এ বছরও মীরসরাই, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা এবং ভূজপুর ও জোরারগঞ্জ থানাসহ সর্বমোট ৮১৫টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর সহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা এখনও ঘটছে। পূজায় নিরাপত্তাদানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্বাস পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে দেবোত্তর বোর্ড গঠন, শত্রু সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে বেহাত হওয়া সম্পত্তি প্রকৃত উত্তরাধিকারীর কাছে হস্তান্তর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা, জীবন-জীবিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈষম্যের অবসান, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সকল অধিকার ও সম-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা, সীতাকুন্ড মহাতীর্থকে জাতীয় তীর্থস্থান ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উত্তর জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি নটু কুমার ঘোষ ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার।
উপস্থিত ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রাখাল দাশগুপ্ত, পরিষদের সাবেক সভাপতি পরিতোষ পাল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শুকলাল দাশ, অমৃত লাল দে, অ্যাডভোকেট বি কে বিশ্বাস, জিতেন গুহ, পরিমল দেব, গণপতি ভৌমিক, হিল্লোল সেন, রূপক কুমার দেব, লিপটন দেবনাথ, অ্যাডভোকেট পার্থ নন্দী প্রমুখ।