কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবন বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাগরে

125

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সবুজ বেষ্টনী হিসেবে পরিচিত ঝাউবাগান এখন সাগরের আগ্রাসনের কবলে পড়েছে। সৈকতের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঝাউগাছ। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য।
গত দু’সপ্তাহে প্রবল বর্ষণে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার সমিতিপাড়া থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের অন্তত কয়েক হাজার ঝাউগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন কি গত সাড়ে ৪ দশকে ৮ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ ভাঙন ও নিধনের কবলে পড়েছে।
এদিকে গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়ও ঝাউবন রক্ষা ও আরও বাগান সৃজনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, লাবণী থেকে ডায়বেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত এক হাজার ৪শ মিটার স্থানে জিওটিউব বসিয়ে ঝাউগাছ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার সৈকতের বিভিন্নস্থানে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউগাছ। সৈকতে সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে এ ঝাউবাগান। কিন্তু সাগরের করাল গ্রাসে শহরের নাজিরারটেক, চরপাড়া, সমিতিপাড়া, ডায়বেটিক হাসপাতাল, শৈবাল পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউবাগানে নেমে এসেছে মহাবিপর্যয়। গত দু’বছরে শুধুমাত্র এসব এলাকায় বিলীন হয়েছে অন্তত ৫ হাজার গাছ। এছাড়া পর্যটন স্পট হিমছড়ি,প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানীসহ টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে ভাঙন-নিধনের কবলে পড়েছে ঝাউবাগান। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনকের নির্দেশে ১৯৭২ থেকে ’৭৩ সালে সৈকতের বালিয়াড়িতে ৪৮৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে ঝাউবাগান করা হয়। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যায়ক্রমে ২০১৮-’১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৮৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ঝাউগাছ লাগানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকতজুড়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ চারা রোপণ করলেও ভাঙন এবং অসাধু ব্যক্তিদের কারণে গাছ নিধনে বর্তমানে গাছের সংখ্যা ২০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন বন বিভাগও। খবর বাংলানিউজের
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যেখানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে অবস্থানগত কারণে হয়তো সেসবস্থানে নতুন চারা লাগানো যাবে না। তবে আগামী ৩ বছরে ১৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে খালি জায়গায় আরও ১ লাখ চারা রোপণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ সেন বাঞ্চু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানি ওভারফ্লু হচ্ছে। সৈকতে পর্যটকদের অবাধ বিচরণ এবং কিছু অসাধু ব্যক্তি সৈকতের বালিয়াড়ি থেকে লতাপাতা কেটে নেওয়ায় বালিয়াড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সৈকতে বালিয়াড়িগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখে সৈকত লতা, নিশিন্দাসহ গুল্ম জাতীয় লতা বা ঝোঁপগুলো। কিন্তু দিন দিন এসব লতাপাতা বিলুপ্ত হওয়ায় সৈকতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের কারণে একদিকে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সাগর লোকালয়ের দিকে চলে যাওয়ায় কমে আসছে মূল ভূ-খÐ।
এছাড়াও স্বাভাবিক সৈকত না থাকলে সামুদ্রিক কচ্ছপ, লাল কাঁকড়াসহ এ ধরনের প্রাণীগুলো আবাসস্থল হারাব। ফলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য যোগ করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফুল আবসার বলেন, একদিকে সাগরের আগ্রাসন অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে সৈকতের ঝাউবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আর যারা ঝাউবাগানে অবৈধ বসতি গড়ে তুলেছেন এবং যারা গাছ নিধন করছেন তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জঝাউবন রক্ষায় জিওটিউবের (বালির বাঁধ) বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা বলেন, লাবণী পয়েন্ট থেকে ডায়বেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত এক হাজার ৪শ মিটার এলাকাজুড়ে ও ঝাউবাগানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে জিওটিউব দিয়ে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ২০ মিটারে একটি টিউব বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ছয়টি টিউব বসানো হয়েছে। আশা করছি, এই মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৮৪ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দ্রæত কাজ সম্পন্ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হলেও জোয়ারের পানির ঢেউয়ের কারণে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। যে কারণে দিনের পুরোটা সময় কাজ করাও যাচ্ছে না যোগ করেন তনয় কুমার।