কক্সবাজারে ২ লাখ ইয়াবাসহ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

69

কক্সবাজারে লুণ্ঠিত বিপুল পরিমাণ ইয়াবা থেকে দুই লাখ পিস জব্দ করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আবদুল্লাহসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইয়াবাসহ তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। এই ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া মসজিদ রোড এলাকার মৃত আবদুল করিমের ছেলে মো. ফয়সাল আবদুল্লাহ (৩০), সদরের খুরুশকুল কুলিয়াপাড়ার মৃত ফজল মিয়ার ছেলে মো. ফিরোজ (৩২), মৃত সোলতানের ছেলে মো. মোস্তাক আহম্মেদ লালু (৩৬)। তাদের মধ্যে ফয়সাল আবদুল্লাহ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য।
পলাতকরা হলেন কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়ার মো. মালেকের ছেলে বিলাই হোসেন (৩২), মাঝিরঘাট সৈয়দ কোম্পানীর বরফ মিলের পাশের মৃত ফরিদের ছেলে ইফতেখার খান বাবু (২৪), টেকপাড়ার মুবিন বহদ্দারের ছেলে নাসির (৩০), মাঝিরঘাটের আবু ছৈয়দ কোম্পানীর ছেলে মুজিব (২২), হাঙ্গরপাড়ার মো. বাঁশি প্রকাশ বাঁশি বহদ্দারের ছেলে বুলু মিস্ত্রি (৩৩), পেশকার পাড়া বেড়িবাঁধ এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে তানভীর (২১), পশ্চিম টেকপাড়ার গোলাম মাওলা বাবুল প্রকাশ জজ বাবুলের ছেলে কায়সার (২৮) ও মো. মিজান (৩২ )।
ডিবির ওসি মানস বড়ুয়া জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও স্থানীয় সূত্রে জানতে পারি গত ৮ ফেব্রূয়ারি কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাট এলাকায় ইয়াবার একটি বড় চালান প্রবেশ করবে। খবর পেয়ে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ইয়াবা চালান উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের তৎপর হই। পরে জানতে পারি সেগুলো লুট হয়েছে। ২৪ ফেব্রূয়ারি দিনগত মধ্যরাতে খবর পাই উক্ত ইয়াবার চালানের একটি অংশ কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউপির কুলিয়াপাড়াস্থ মোস্তাক আহম্মেদ লালুর বসত বাড়িতে মজুদ করে ভাগ-বাটোয়ারা করা হচ্ছে। তখনই সঙ্গীয় অফিসার-ফোর্সসহ মোস্তাকের বাড়িতে অভিযান চালাই। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালানোর চেষ্টা করে। তখন ফিরোজ ও মোস্তাককে আটক করা হয়। এসময় তাদের কয়েকজন সহযোগী পালিয়ে যায়। উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে তাদের কাছে এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট রয়েছে। মোস্তাকের রুমের খাটের নিচ হতে একটি চটের বস্তার ভেতর রক্ষিত ১০ বান্ডিলে রাখা ১ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ধৃতদের স্বীকারোক্তিতে তাদের সহযোগী হিসেবে ফয়সাল আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়- ফয়সালের সহযোগিতায় লুণ্ঠিত ইয়াবাগুলো বিকিকিনির চেষ্টা করা হচ্ছিল এবং অপর পলাতক আসামি মিজানের যোগসাজশে মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে ইয়াবাগুলো কক্সবাজারে আনে তারা।
ওসি মানস আরো জানান, উদ্ধার ইয়াবা ছাড়াও চালানের বড় একটি অংশ মিজানের কাছে এবং আরেকটি বড় অংশ পশ্চিম লারপাড়া গ্যাস পাম্পের পেছনে মোক্তার প্রকাশ মোক্তার মেম্বারের ছেলে মো. শহিদ (৩৮) ও মো. বোরহানের (২৭) কাছে রয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে আরো ১ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রূয়ারি ইয়াবা লুটের পর প্রথমে মোস্তাকের নৌকা করে ইয়াবার একটি অংশ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লুটকৃত ইয়াবার ওই অংশটি রাখা হয় তার ভাই রমজানের বাসায়। ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
এদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল নারীসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার একদিনের ব্যবধানে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ফয়সাল আবদুল্লাহ আটক হওয়ার খবরে জেলা শহরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ইয়াবা লুটকারীদের ধরতে পুলিশ ইতোপূর্বে ঘটনাস্থলসহ সম্ভাব্য স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। এই ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িত এবং লুটকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি সফল অভিযানও হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রূয়ারি বিকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটস্থ আবু ছৈয়দ কো¤পানির জেটিতে মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবার একটি বিশাল চালান খালাস হয়। জেটি দিয়ে ক‚লে তোলার সময় স্থানীয় তালিকাভুক্ত অপরাধী মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনী ইয়াবার চালানটি লুট করে। মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনীতে ওই সময় ছিলো তার ছোট ভাই কায়সার, জেটির মালিকের ছেলে মুজিব, ইফতেখার খান বাবু, সাইফুল, জুনায়েদ, নাছির মিয়া, ভুলু মিস্ত্রি, বাদশা, তানভিরসহ আরও কয়েকজন। লুটের সময় জেটিঘাটে ইয়াবার মালিক বোরহান, তার ভাই শহীদ ও তাদের পার্টনার সাইফুল এবং আবুল কালামের সঙ্গে মিজান বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইয়াবার মালিকরা।