কক্সবাজারে হচ্ছে ২০০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্র

146

মরণনেশা মাদককে চূড়ান্তভাবে নির্মূলের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে শীর্ষস্থানীয় মাদক কারবারিরা। পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছে তালিকাভুক্ত অনেকেই। প্রশাসনের চতুর্মুখী তৎপরতার কারণে মাদক অনেকটা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে এসেছে। তবে, জনসচেতনতার অভাব, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মাদক সংশ্লিষ্টতা, মাদক ব্যবসায় রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের কারণে পুরোপুরি নির্মূল হচ্ছে না।
অন্যদিকে প্রয়োজনীয় জনবল, লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকলেও থেমে নেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অভিযান। ৩টি বিশেষ কৌশলে এগুচ্ছেন তারা। এক বছরে ৭ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৫ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র মতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএনসি কক্সবাজার ১৭৬০টি অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ৩৯২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে মোবাইলকোর্টে মামলা রয়েছে ১৯৫টি। এসব মামলার মোট ৪৬৭ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৪০ জন। চাহিদার অর্ধেকের কম জনবল হলেও থেমে নেই সরকারি এই অফিসের তৎপরতা। বিগত বছরে রিকভারীর মধ্যে রয়েছে ২২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৮ ইয়াবা, ১৬ বোতল বিলাতি মদ, ১৩.৬৫০ কেজি শীসা, ৩৪ বোতল ফেনসিডিল, ৫ ক্যান বিয়ার, ৩.৬৫৮ কেজি গাঁজা, ১১১১.৬৫ লিটার চোলাই মদ, ৭০০ এমএল অ্যালকোহল, ৩৩০০০ লিটার জাওয়া, ৩.২০০ লিটার তাড়ী, মিনি বাস ১টি। যার আনুমানিক মূল্য ৭ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৫ টাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল জানান, চাহিদা হ্রাস, সরবরাহ হ্রাস ও ক্ষতি হ্রাস- এই তিন টার্গেটে আমরা কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফ নিয়ে ‘স্পেশাল জোন’ করা হয়েছে। যেখানে ১ জন উপপরিচালকসহ ২৭ জনের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে এই স্পেশাল জোনে ১৯ জন কর্মরত আছেন। সাথে আনসার ব্যাটালিয়নে ১০ সদস্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা (ওয়াকিটকি) আরো বেশী শক্তিশালী করতে টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলায় ২৫০ ফিটের ‘ওয়্যারলেস টাওয়ার’ স্থাপন করা হয়েছে।
মাদকের চূড়ান্ত নির্মূলে গঠন করা হবে আরো ৯টি ইউনিট। জাতিসংঘের ইউএনওডিসি থেকে ৩টি স্পীটবোড দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিএনসির ১৪ সদস্য শ্রীলংকায় গিয়ে নৌ-প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন।
জেলার ৩২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মাদক বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে ডিএনসি কক্সবাজার। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ২টি করে মানবদেহে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্বলিত ফেস্টুন টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত মাদকবিরোধী শ্রেণি বক্তব্য, আলোচনা, লিফলেট বিতরণসহ নানামুখী প্রচারণা চলছে।
মাদকের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে বিরাট দৃষ্টিনন্দন বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কারাগারে বন্দিদের উদ্বুদ্ধকরণ সভা বাস্তবায়ন করেছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস।
কক্সবাজারে সরকারিভাবে কোনো মাদক নিরাময় কেন্দ্র নেই। যদিওবা দুইটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নোঙর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও ফিউচার লাইফ মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্র সাধ্যমতো কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসির সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল জানিয়েছেন, কক্সবাজারে ২০০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য টেকনাফের বাহারছড়া শীলখালী মৌজার ১০ একর জায়গা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যা হবে কক্সবাজারের জন্য মাইলফলক। তিনি জানান, মাদক নির্মূল খুব একটা সহজ কাজ নয়, এটি বড় চ্যালেঞ্জ। দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা।
উখিয়া-টেকনাফের স্পেশাল জোন বাদে ৬ উপজেলায় এনফোর্সমেন্টের জন্য মাত্র ৮ জন লোক রয়েছে। মাদকের কারণে আলোচিত এলাকা হওয়া সত্তে¡ও এতো কম সংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ করা খুবই ঝুঁকি। কক্সবাজার অফিসের জন্য সৃষ্ট পদে জনবল পদায়ন, যানবাহনসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো দরকার বলে জানান ডিএনসির এই কর্মকর্তা।