কক্সবাজারে সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন

25

কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপে অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কারণে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় হার্ডলাইনে রয়েছে জেলা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। একইসঙ্গে কাজ করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুর পেঁচারদ্বীপে কটেজ নামে একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলিয়ান এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টা চালায় কটেজ মালিক ও কর্মচারীরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কটেজ মালিকসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের মানিব্যাগ ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাথন চন্দ্র সূত্র ধর বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা খুবই সতর্ক। পর্যটকরা যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য জেলা প্রশাসনের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ক্রমে সমুদ্র সৈকতসহ আশাপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র (ইনবক্স)। যেকোনও অভিযোগ এখানে করতে পারবে পর্যটকরা। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে একটি হটলাইন নম্বর-০১৭৩৩৩৭৩১২৭।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয়। এতে দু-একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে কোনও সন্দেহ নেই। যেমনটি ঘটেছে কক্সবাজার শহরের বাইরে পেঁচারদ্বীপ নির্জন এলাকায় অবস্থিত গুড ভিবে কটেজে। অস্ট্রেলিয়ান এক পর্যটক তরুণীকে ওই কটেজে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হার্ডলাইনে রয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লর রহমান বলেন, পেঁচারদ্বীপে অষ্ট্রেলিয়ান পর্যটক তরুণীকে নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনায় আমরা দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। যা এখনও তদন্ত চলছে এবং আসামিরা কারাগারে রয়েছে। এরপরও আমাদের বাড়তি সতর্কতার দরকার। এ কারণে পুরো জেলায় সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া বিচ বাইক, বাইসাইকেল, জেডেস্কি টহলসহ বিভিন্নভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। শুধু কক্সবাজার সৈকত নয়, এর আশপাশে যেসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো আছে যেমন হিমছড়ি, ইনানীসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে।
এদিকে, চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতে ভিড় বাড়ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ছুটি থাকায় প্রতি প্রতিবছরের মতো পর্যটন শহর কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে এমনই প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ইতোমধ্যেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও রামুর বৌদ্ধবিহার, হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালী, সোনাদিয়া ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার পর্যটনকেন্দ্র গুলোতেও বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব এলাকায় যেসব অসাধু ব্যবসায়ী পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। হোটেল-মোটেল, খাবার রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে সব স্থানে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প বিকাশে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ।