কক্সবাজারে মরণব্যাধি এইডস’র ভয়াবহ বিস্তার

21

কক্সবাজারে ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটছে মরণব্যাধি এইডস’র। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এইডস রোগের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রয়েছে এইডস ঝুঁকিতে। পেশাদার- অপেশাদার যৌন কর্মী ও মাদকাসক্তদের অবাধ যৌনাচারের কারণে বর্তমানে জেলায় এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩৮ জন। এর মধ্যে ৩৯৫ জনই রোহিঙ্গা। জেলায় এ পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৯ রোহিঙ্গাসহ ৭২ জন। আক্রান্ত ও মৃতের এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এইচআইভি/এইডস নিয়ে কাজ করা এনজিও ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার সূত্রে পাওয়া গেছে এ ভয়াবহ চিত্র। এক বছর আগেও এই রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১১ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হলে এইডস রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
জরিপ যায় হোক, কক্সবাজার যে ভয়াবহ এইডস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ নিয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই। প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের ৩২ শতাংশ যৌনকর্মী এইডস রোগে আক্রান্ত। কক্সবাজারের সবর্ত্র এখন মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ছড়াছড়ি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইচআইভি নিয়ে কাজ করা একজন এনজিও কর্মী জানান, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত রয়েছে । তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করছে। এতে কক্সবাজারে এই রোগ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা যৌনকর্মী ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে যৌন কর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমনও এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ। এদিকে ভাসমান যৌনকর্মী ছাড়াও বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা অনেকেই এইডস আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। যাদের অনেকেই বিদেশে অবস্থানের সময় সেখানকার যৌনকর্মীদের সাথে অবাধে মেলামেশা করে এসব রোগ দেশে বহন করে এনেছে। এইচআইভি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এসব ব্যক্তির কারণে তাদের স্ত্রীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এইচআইভি নিয়ে কাজ করা এনজিওদের কাছ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় ২ হাজারের মতো যৌন কর্মী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগের এইচআইভি সম্পর্কে স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। ফলে এদের মধ্যে কতজনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও সমকামীদের বিষয়টি অনেকেই জানেনা অথবা জানলেও লজ্জায় অনেকেই মুখ খুলেনা বলেও জানা যায়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন আবদুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গা স্রোত শুরু হওয়ার পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫৩৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আক্রান্ত ৫৩৮ জনের মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ, ২৫৫ জন নারী ও ৬৩ জন শিশু রয়েছে। একজন হিজড়ার শরীরেও এইচআইভির জীবাণু পাওয়া গেছে। গত বছরও এই সংখ্যা ছিল ৪১২ জন। ২০১৭ সালে ছিল ১৩২ জন। এ রোগে ২৯ রোহিঙ্গাসহ ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মারা যাওয়া ছাড়া এইডস আক্রান্ত জীবিতরা কে, কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার কোন হিসাব সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ন্যাশনাল এইডস বা এসটিডি কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্প চালু আছে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমসিটি) নামে একটি প্রোগ্রাম চালু হয়। এ প্রোগ্রামে এইচআইভি পজিটিভ নারীর গর্ভের সন্তানটি যাতে সুস্থ থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মতিন বলেছেন, কক্সবাজারকে এইডস এর জন্য এখন বিপদজনক এলাকা। তিনি জানান, রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে এই রোগের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এইডস প্রতিরোধে সবাই সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগ ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে।