কক্সবাজারে ইয়াবাপাচার কিছুতেই থামছে না

42

কক্সবাজার-টেকনাফ রোডে ইয়াবা পাচারের উৎসব চলছে। ইয়াবা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতই কঠোর হচ্ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইয়াবা পাচার। কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা কারবারীদের দৌরাত্ন্য। পাচারকারীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরু থেকে হঠাৎ করে অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে ইয়াবা পাচার। গত ১০ দিনে ইয়াবার কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ছে টেকনাফ ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা সিন্ডিকেট নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে বলে জানায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল সোমবার ভোরে টেকনাফ উপজেলায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইমাম হোসেন নামের এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি দেশিয় বন্দুক, কার্তুজ ও ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা নাফ নদসংলগ্ন কেওড়া বাগান এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ইমাম হোসেন (২৫) টেকনাফের হ্নীলার জাদিমুরা এলাকার আবদুস সালামের ছেলে। একইদিন পৃথক অভিযানে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ও শাহপরীর দ্বীপ প্যারাবন এলাকা থেকে পৃথক দুটি অভিযানে ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ডের সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মিরাজ আহম্মেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চলতিমাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি বড় চালান ধরা পড়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই জেলা শহর, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ইয়াবার ছোটখাটো চালান ধরছে। সে সঙ্গে ধরা পড়ছে পাচারকারীরাও। তবে আটককৃতদের অধিকাংশই মিয়ানমারের নাগরিক।
গত ১ ডিসেম্বর হ্নীলা প্রধান সড়কে অভিযান পরিচালনা করে ১০ কোটি টাকার ইয়াবাসহ আবুল কালাম নামে এক রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারীকে আটক করে র‌্যাব। সে মিয়ানমার থেকে আসা মংডু মাংগালা এলাকার মৃত ইউসুফের পুত্র। ২ ডিসেম্বর পৃথক ২টি অভিযান পরিচালনা ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ৪৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এসময় ইয়াবার মালিক আব্দুল মজিদকে (৩৯) আটক করা হয়। ৪ ডিসেম্বর হ্নীলা সীমান্ত এলাকা থেকে আবারও ৪ কোটি, ৫০ লক্ষ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এসময় হ্নীলা জাদিমুরা এলাকার আব্দুল মোনাফের পুত্র শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আমীর হামজা (৩৫) ও টেকনাফ পৌরসভা অলিয়াবাদ এলাকার মো. হোসেনের পুত্র মো. আইয়ুবকে (২৫) আটক করে বিজিবি। ৫ ডিসেম্বর ৬০ হাজার ইয়াবা ও অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে আটক করে বিজিবি। ফরহাদ হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম লেদা এলাকার মৃত আমীর হোসেনের পুত্র এবং হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ স¤পাদক। ৭ ডিসেম্বর হ্নীলা জাদিমুরা নাফনদীর কিনারা থেকে ৪৪ হাজার ইয়াবাসহ হ্নীলা ইউনিয়ন জাদিমুরা ২৭-নং রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ সি-বøকের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো. হাফেজ আহমদকে (২৫) আটক করে বিজিবি। ৮ ডিসেম্বর হ্নীলা ইউপির দমদমিয়া ওমরখাল সংলগ্ন নেচার পার্ক এলাকা থেকে ১০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ রমজান নামের এক ইয়াবা কারবারীকে আটক করে বিজিবি। সে উপজেলার বাহারছড়া ইউপির আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
এদিকে র‌্যাব-১৫ সিপিসি-১ টেকনাফ শাখার দায়িত্বরত কো¤পানি কমান্ডার লে. মির্জা শাহেদ মাহাতাব জানান, গত নভেম্বর মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৯ কোটি ৪৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। উক্ত অভিযানে মাদক বিক্রির নগদ টাকাও জব্দ করা হয়। পাশাপাশি মাদক কারবারে জড়িত ৬ জন অপরাধীকেও আটক করা হয়।
জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রশাসনিক নজরদারি খুবই দুর্বল। বিকেল চারটার পর পুরো নিয়ন্ত্রণ রোহিঙ্গা মাঝি ও মৌলভীদের হাতে চলে যায়। তবে রোহিঙ্গারা চাইলে যে কেউ সেখানে ইচ্ছেমতো যাওয়া আসা করতে পারে। এ সুযোগে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উখিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, এমন কোন অপরাধ নেই, যা রোহিঙ্গারা করছে না। তাদের বড় একটি অংশ এখন ইয়াবা কারবারে জড়িত হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কিছু ধরা পড়লেও বেশির ভাগই অধরা থেকে যাচ্ছে। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে নিয়মিত পুলিশি নজরদারি দরকার।