কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীতে বসতবাড়ি বিলীন

54

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা উত্তর চাঁন্দেরপাড়ায় অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে ৩০টির অধিক বসতবাড়ি নদীর মাঝে বিলিন হয়ে গেছে। আরো ৫৫টি বসতবাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরু না হতেই নদী ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। চাঁন্দেরপাড়া গ্রামের বসতবাড়ি স্থাপনা ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। এতে চরম আতংকে মধ্যে রয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গনের ফলে আয়তন ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়া হলে অচিরেই ঘরবাড়ী নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। চাঁন্দেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, নদীর ভাঙ্গনে গত কয়েক বছরে আমাদের ৩০টির বেশী বসতবাড়ী নদী গর্ভে হারিয়েছি। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা আসে যাই কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন, এই বর্ষা মৌসুমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ জরুরীভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করলে যে কটি বসতবাড়ি আছে, তাও নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা সম্ভব। ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ বৃদ্ধ আলতাজ মিয়া বলেন, গত বছর থেকে বাঁকখালী নদী ভাঙ্গনে আমার বসতঘরটির ৪ ভাগের ৩ ভাগ স্থাপনা নদীতে চলে গেছে। ৩০ শতক জায়গা জুড়ে বাড়ি ছিল। এখন সেটি শূন্য শতকে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। খুবই অসুস্থ। বর্তমানে আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। বাঁকখালী নদীর ঢেউয়ের গর্জনে নির্ঘুম, অতি কষ্টে রাত্রিযাপন করছি। সরকারীভাবে কোন সহযোগিতা পায়নি। ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ মোবারক আলীর জানায়, আমার পুরো বাড়ি ভিটা বাঁকখালী নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাড়া বাসায় অতি কষ্টে দিন যাপন করছি। ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল গফুর বলেন, বাঁকখালী নদীর ভাঙ্গন আজ নতুন কিছু নয়। রাবার ড্যাম স্থাপনের কারণে আমার নিজ বাড়ীসহ প্রায় ৩০টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বহুবার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিটি দিয়েছি। এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলকে বলেছি। তারা ভাঙ্গনের বিষয়ে গুরুত্ব দেননি বিধায় আজ এলাকাবাসীর এই পরিনতি। খুবই দুঃখজনক বিষয়। স্থানীয় বাসিন্দা জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, বর্তমান নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সর্ব প্রথম চাঁন্দেরপাড়ার নদী ভাঙ্গন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছিল। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটে নদী পার্শ্ববর্তী মানুষগুলোর। ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা টিপু সুলতান বলেন, প্রতি বছর চাঁন্দেরপাড়া এলাকায় নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া থেকে হ্রাস পাওয়ার সময় পর্যন্ত এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ইউনিয়নের পরিষদ যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা দিয়েছি। চেয়ারম্যান টিপু বলেন, নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ পরিদর্শনপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। এদিকে, নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম মাহফুজুর রহমানকে এলাকাবাসী অবহিত করে। এরপর গত ২১জুন সরেজমিন ঘটনাস্থল স্বচক্ষে দেখেন তিনি। কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সাথে। নদীর গ্রাসের শিক্ষার মানুষগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান। ভাঙ্গনরোধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।