কক্সবাজারসহ দেশের সকল পর্যটন স্পটে নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি

35

বর্তমানে দেশে চলছে পর্যটন মৌসুম। দেশের প্রধান পর্যটন স্পট কক্সবাজার এখন পর্যটকের ভিড়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আরাধ্য স্পট। বিশ্বের বৃহত্তম এ সমুদ্র সৈকত এখনো আন্তর্জাতিক মানের হয়ে ওঠেনি। সৌন্দর্য্যবর্ধন, পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা বিদেশের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। পর্যটনমন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া জরুরি। দেশে বহু সমুদ্র সৈকত রয়েছে। তৎমধ্যে কুয়াকাটা, পতেঙ্গা, আনোয়ারার পারকি, বাঁশখালী সৈকত, সীতাকুণ্ডসহ সৈকতগুলোতে পর্যটক সুবিধার অভাবে পর্যটকরা স্বাদ পায় না। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতের উন্নয়ন কাজ চলছে। পরিবেশ এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। সৈকতের পরিবেশ সৃষ্টিতে এখানে আরো বহু কাজ বাকী। পারকি সৈকতে সামান্যই উন্নয়ন কাজ হতে দেখা গেছে, যা খুবই অপ্রতুল। বাঁশখালী সৈকতের এখনো কোন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। কুয়াকাটা সৈকতেও তেমন পর্যটন সুবিধা নেই। তবু মানুষ সৈকতের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণের বশে সেখানে ভিড় করে। সুন্দরবন, সিলেট, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, চকরিয়া, টেকনাফ ইত্যাদি এলাকায় যে সকল পর্যটন স্পট রয়েছে তার পরিকল্পিত উন্নয়নের তেমন কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। তারপরও দেশ বিদেশের পর্যটকরা পাহাড়ে, সমুদ্রে চা-বাগানে তাদের অবসর বিনোদনের জন্য ছুটে যায়। এমতাবস্থায় দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট কক্সবাজার ও টেকনাফে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিঘিœত হবার খবরে পর্যটক মহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
আমাদের পর্যটন স্পটগুলোতে যে পরিমাণ সৌন্দর্য্য রয়েছে তাতে পর্যটকমহল অনেকখানি সন্তুষ্ট। কিন্তু পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হলে পর্যটন শিল্পে ধস নামবে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ বর্তমানে তৎপর হয়ে ওঠেছে। স্পটের নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাবস্থায় তাদের তৎপরতার পরিচয় দিতে হবে। কক্সবাজারে পর্যটকরা নিরাপত্তা না পেলে অন্যান্য পর্যটন স্পটে পর্যটকরা যাওয়ার সাহসই পাবে না।
কক্সবাজারের সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সুন্দরবনসহ দেশের সকল পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর অর্থ পুলিশ দ্বারা পর্যটকদের হয়রানি নয়। পুলিশকে পরিষ্কার গাইট লাইন দিতে হবে যে, পর্যটকরা যেন স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে। শুধুমাত্র অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণই পুলিশের মূল লক্ষ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।
আমরা চাই আমাদের পর্যটন শিল্পে কোন অবস্থাতে যেন ধস না নামে। তাছাড়া পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার যে সব সমস্যা আছে সেগুলোও দ্রুত কাটিয়ে তুলতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আমাদের সবুজ বনানী, পাহাড়-নদী-ঝর্না লেক, সমুদ্র-সৈকতের সৌন্দর্য্য বিদেশের পর্যটন স্পটগুলোর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে বিদেশ থেকে অধিকসংখ্যক পর্যটক এদেশে আসছে না। পর্যটন মন্ত্রণালয় ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এদেশ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত ইত্যাদি পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বিদেশি পর্যটকদের বেশি বেশি আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে।
কাশ্মিরে যে পর্যটকের মেলা বসে তার প্রধান কারণ পর্যটকদের জন্য ভারত সরকার অঢেল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এদেশ বিশেষত বৃহত্তর চট্টগ্রামে পর্যটনের যে অঢেল সম্ভাবনা আছে তাকে সরকারের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা দান খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও পর্যটন স্পটের যোগাযোগ সহজতর করা হলে এদেশ বিশ্বমানবের ভ্রমণবিলাসী মনকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে।