কওমি বোর্ডের দাওরায়ে হাদিসের প্রশ্নপত্র ফাঁস

265

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীন দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় সকল পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার এক জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয় হেফজাতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর নিয়ন্ত্রণাধীন কওমি মাদ্রাসাগুলোর সরকারি বোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। বিগত কয়েকটি পরীক্ষায় ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসাসহ দেশে কয়েকটি স্থানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়া যায়।
শনিবার সকালে ঢাকার মতিঝিলে সংস্থাটির কার্যালয়ে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে একটি জরুরি বৈঠকে বসে নেতারা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান দায়িত্বশীলরা। এছাড়া ওই বৈঠকে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) মেশকাতের (ফজীলত) কেন্দ্রীয় পরীক্ষাও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে। কওমী সনদের সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষা নিয়ে হোঁচট খেলো এ সংস্থাটি। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান।
ওই দিন সকাল ৭টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে দাওরায়ে হাদিসের প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে জরুরি আলোচনা হয়। বৈঠকে পরবর্তী সকল পরীক্ষা স্থগিত ও অনুষ্ঠিত সব পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ, প্রশ্নফাঁসরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঢাকার মতিঝিলে ওই সংস্থাটির কার্যালয়ে বৈঠক বসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আল হাইয়াতুল উলইয়ার আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি রুহুল আমিন, মুফতি আরশাদ রাহমানী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা শামসুদ্দিন জিয়া, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বোর্ডের আলেমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে তা প্রতিরোধ করতে নতুন করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রশ্নপত্র পরিবহন, কেন্দ্রে-কেন্দ্রে নেওয়া, বিশেষ তালার ব্যবস্থা করা, তালার চাবি সুনির্দিষ্ট এক থেকে দুজনের কাছে রাখার বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন বোর্ডের কর্তা আলেমরা।
তাছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনার তদন্ত করতে ওই বৈঠকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ এ সংস্থা। ওই কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- তদন্ত কমিটির আহŸায়ক হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মুফতি রুহুল আমিন, সদস্য মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া ও মাওলানা মাহফুজুল হক।
চলতি বছর আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে ৬টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ২৬ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে ৬টি শিক্ষা বোর্ড হলো- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। এ মাসের ৮ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ এপ্রিল।
এদিকে বৈঠকে উপস্থিত হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা মুসলেহুদ্দিন রাজু জানান, বাতিল হওয়া সকল পরীক্ষা নতুন করে অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাইয়াতুল উলইয়া বৈঠকে পরীক্ষার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পরীক্ষা বিরতি থাকবে।
অন্যদিকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) চলমান ৪২তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার শুধুমাত্র মেশকাত জামাতের (ফজিলত) পরীক্ষাও কর্তৃপক্ষ স্থগিত করেছে বলে জানান বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তিনি আরও জানান, ফজিলত ১ম বর্ষে গৃহীত সকল পরীক্ষা বাতিল ও অনুষ্ঠিতব্য সকল বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বেফাক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার নতুন সময়সূচি জানানো হবে। তবে অন্যান্য বেফাকের জামাতের পরীক্ষাসমূহ অপরিবর্তীত তথা নির্দিষ্ট তারিখে ও সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৮ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) ৪২তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সারাদেশে শুরু হয়। এবার সারাদেশে ২৯টি জোনের মাধ্যমে এক হাজার ৪৮২টি কেন্দ্রে এক লাখ ৫২ হাজার ৩৯৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে গতবছর ১৯ সেপ্টেম্বর ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ পাস হয়। বিগত ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে কওমি সনদকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ হয়।