ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানি দাবি

86

চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫০তম বোর্ড সভায় আগামি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবাসিক ও অনাবাসিক খাতে পানির মূল্য প্রতি ইউনিট ৯.৪৫ থেকে ৯.৯২ পয়সায় ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে বলা হয়, মূল্য বৃদ্ধির আগে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে সিস্টেম লসের নামে পানি চুরি, অপচয় বন্ধ না করে ভৌতিক বিল ও অতিরিক্ত বিলের নামে গ্রাহক হয়রানি ভোক্তাদের জন্য অসহনীয় ও অসন্তোষের কারণ হতে পারে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পূর্বে গ্রাহকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কোন প্রকার মতামত না নিয়ে একতরফাভাবে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া অন্যায্য ও ভোক্তা স্বার্থবিরোধী এবং অগ্রহণযোগ্য। দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সহজতর হওয়া উচিত। বোর্ড সভা ও মন্ত্রণালয়ের আদেশে দাম না বাড়িয়ে গ্রাহক ও এই খাতে সব স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে এবং যাবতীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে দাম নির্ধারণ করা উচিত। গ্রাহকদের বিলগুলো মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু তদারকির আওতায় এনে মিটার ও বিলের সাথে সমন্বয় করার জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা দরকার।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ওয়াসার সরবরহকৃত পানির ৮৮% গ্রাহক হচ্ছেন আবাসিক গ্রাহক। আর ওয়াসা দিনে চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ পানি সরবরাহ করতে পারে। যার ফলে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানির জন্য এখনও হাহাকার। আর চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে নতুন নতুন প্রকল্পের কথা বলে নগরবাসীকে বারবার বিভ্রান্ত করছে এবং দাম বাড়ানোর কথা বলে প্রকারান্তরে ওয়াসার অভ্যন্তরে পানি চুরি, অপচয় ও মিটার রিডারদের কারসাজিকে উসকে দিচ্ছে। নগরীর অধিকাংশ এলাকায় যেখানে পানির জন্য হাহাকার, সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর পানির সমস্যা সমাধান না করে নতুন করে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ওয়াসার অধিকাংশ গ্রাহকই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের আয়ের মানুষ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই শ্রেণির মানুষ বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য ও সেবা সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধির যন্ত্রণায় কাতর। সেখানে নতুন করে পানির দাম বাড়ায় মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিবে।
‘গ্যাস কোম্পানীগুলোর মিটার রিডারদের মতো ওয়াসার মিটার রিডাররাও কোটি কোটি টাকার মালিক। তারা কিছু গ্রাহকদের সাথে চুক্তিতে বিল করছে, যার দায়ভার সিস্টেম লসের নামে সকলকে বহন করতে হচ্ছে।’
ক্যাব পানির অপচয় রোধ, সেবা সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা রোধে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রাহক সেবার মান ও অনিয়ম রোধে ত্রিপাক্ষিক গণশুনানির আয়োজন করা, গ্রাহক হয়রানি রোধে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের জন্য ডিজিটাল হেলপ লাইন চালু ও হেলপ ডেস্ক আধুনিকায়ন, দাম বাড়ানোসহ সেবার মান উন্নয়নে নীতিমালায় ভোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি করে জানালেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
নেতৃবৃন্দ ওয়াসাসহ সব সরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থায় জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবিও জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন-ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।