ওয়াসার গ্রাহক প্রতিনিধি নিয়োগ নিয়ে লুকোচুরি

67

‘পানি ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধি’ নিয়োগে লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চার বছর ধরে গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্ব করা সোলায়মান আলম শেঠের বিষয়ে প্রশ্ন উঠায় মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে বিকল্প নাম প্রস্তাবের নির্দেশ দেয়। কিন্তু চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওয়াসা গ্রাহক প্রতিনিধির নাম প্রস্তাব করেনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা কার্যকর করবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সিদ্ধান্তের পর কার্যকর করা না হলে তা পরবর্তী বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হবে। গ্রাহক প্রতিনিধির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কি হয়নি তা এ মুহূর্তে বলতে পারবো না।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠনের পর থেকে পানি ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম
সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। চার বছর আগে মেয়াদ শেষ হলেও তিনি ছাড়েননি দায়িত্ব। নিয়মিত নিয়েছেন ওয়াসা থেকে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। অন্যদিকে গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা থাকলেও একের পর এক গ্রাহকদের স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন তিনি। খোদ ওয়াসার বোর্ড সভায় তিনি গ্রাহকদের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন গ্রাহকরা। এ অবস্থায় ওই পদে নতুন একজন পানি ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ২৯ জুলাই এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পানি ব্যবহারকারীগণের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের সদস্য জনাব মো. সোলায়মান আলম শেঠ এর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬ এর ৬(১*গ) ও ৬(২) ধারা অনুযায়ী উক্ত পদে নিয়োগের লক্ষ্যে আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে পানি ব্যবহারীগণের একজন প্রতিনিধির মনোয়ন স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার চার সপ্তাহ অতিক্রম হলেও এখনো ওয়াসা গ্রাহক প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাব করেনি। ওয়াসার সংস্থাপন শাখায় নাম প্রস্তাবের পত্র প্রেরণের কোনো রেকর্ড নেই। তাছাড়া ওয়াসার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নাম প্রস্তাবের বিষয়ে কিছুই জানেন না। যদিও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি তিন জনের নাম প্রস্তাব করে পত্র পাঠানো হয়েছে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, গ্রাহক প্রতিনিধি তো একজনকে করা হয়। আমরা তিন জনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় এদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করবে। আমরা চলতি সপ্তাহেই চিঠি পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রতি তিন বছর পর পর বোর্ড পরিবর্তন হয়। সেপ্টেম্বরে নতুন বোর্ড হবে। কিছু সদস্য পরিবর্তন হতে পারেন আবার কিছু থাকতেও পারেন।
এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো পত্রে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। বিষয়টি নিয়ে ৯ আগস্ট ওয়াসার বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। এতে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর একজন প্রতিনিধিসহ মোট তিন জনের নাম প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত হয়। পরের দিনই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ড সভায় সিদ্ধান্তের তিন সপ্তাহ অতিক্রম হলেও কাদের নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে সেটাও প্রকাশ করছে না ওয়াসা। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ক্যাব।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবসময় আন্তরিক এবং তিনি চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য ইতিমধ্যেই বিপুল বরাদ্দ দিয়েছেন। ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার আজ্ঞাবহ কাউকে গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দিতে তৎপর। সে কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ৫২তম বোর্ড সভার নির্দেশ উপেক্ষা করে কালক্ষেপণসহ নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। ৫২তম বোর্ড সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বোর্ড সদস্য মো. সোলায়মান আলম শেঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়াসা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করেছে।
দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ অর্থ চট্টগ্রাম ওয়াসাকে প্রদান করা হলেও কাজের মান, স্বচ্ছতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। প্রকল্পের নামে পুকুর চুরি যেমন হয়েছে তেমনি স্বজনপ্রীতি-লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ওয়াসায় প্রকৃত ভোক্তা প্রতিনিধিত্ব না থাকায় ভোক্তাদের সমস্যাগুলি কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন হচ্ছে না। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা নং ৫ এর ১৬ উপ-ধারায় বলা আছে, ক্যাব দেশের সর্বত্র ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। আর তারই ধারাহিকতায় ক্যাব সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তা র্স্বাথ সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণী ও কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করে আসলেও চট্টগ্রাম ওয়াসায় তা মানা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনাও উপেক্ষা করা হচ্ছে।