ওয়ার্কশপে দুই বছরে ৯৩৭ কোচ মেরামত

66

যাত্রী চাহিদা থাকলে জরুরি প্রয়োজনে ট্রেনে কোচ সংযুক্ত করতে বড়ধরনের বাধার সম্মুখীন হতো পরিবহন বিভাগ। আর এ বাধার বড় কারণটিই ছিল কোচ সংকট। যথাসময়ে রেল ওয়ার্কশপে কোচ মেরামত না হওয়ায় চলাচলকারী ট্রেনে চাইলেও কোচ সংযোজন করা সম্ভব হতো না। যে কারণে অনেক সময় নির্ধারিত ট্রেনের কোচ সময়মত মেরামত না হওয়ায় যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটও ফেরত দিতে হতো। বর্তমানে কারখানা আধুনিকায়নে সক্ষমতা বাড়ায় ওয়ার্কশপে কোচ মেরামতের হার বেড়েছে। গত দুই বছরে পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় মেরামত হয়েছে ৯৩৭টি কোচ। এরমধ্যে চলতি সালের ১১ মাসেই ৫০১টি কোচ মেরামত করা হয়েছে।
ওয়ার্কশপ সূত্র জানায়, বর্তমানে কারখানা থেকে কোচ মেরামতের হার বেড়ে যাওয়ায় স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী ট্রেন চালানোর পরেও কোচ মজুদ রাখা সম্ভব হচ্ছে। এতে ধর্মীয় উৎসবসহ বৃহস্পতি, শুক্রবার ও শনিবার অতিরিক্ত কোচ সংযোজনে সুবিধা হচ্ছে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনেও রেল ভবনের অনুমতি সাপেক্ষে লাগানো হচ্ছে অতিরিক্ত কোচ। আর এসবই সম্ভব হচ্ছে কোচ সংকট নিরসনের কারণে। তবে জনবল সংকট কেটে গেলে আরো বেশি কোচ মেরামত করা সম্ভব হতো ওয়ার্কশপে।
পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক (ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন) মো. সাইফুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ওয়ার্কশপে কোচ মেরামতে জটিলতা কেটেছে। এখনো দ্বিগুণ হারে কোচ মেরামত হচ্ছে। একটি সময় ছিল ওয়ার্কশপে মেরামতের অপেক্ষায় থাকা কোচের জন্য পরিবহন বিভাগ থেকে তাগাদা দেয়া হতো। অনেক সময় ক্যাটারিং সার্ভিস ছাড়াও বিভিন্ন দফতর থেকে ওয়ার্কশপে পাঠানো কোচ দ্রæত মেরামত করে দিতে সুপারিশও করা হতো। চলমান ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন প্রকল্পটির কারণে কাজের গতি কিছুটা বেড়েছে। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের কার্যক্ষমতা আরও বাড়বে।’
রেলের প্রকৌশল বিভাগের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১০ সালে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে ২৯৪টি, ২০১১ সালে ৩২৭টি, ২০১২ সালে ২৯৭টি, ২০১৩ সালে ২৬০টি, ২০১৪ সালে ২৭১টি, ২০১৫ সালে ২৯২টি, ২০১৬ সালে ৩৫৭টি, ২০১৭ সালে ৪৪৬টি, ২০১৮ সালে ৪৩৬ টি এবং ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৫০১টি কোচ মেরামত হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস নাগাদ কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭০টি। এরমধ্যে গত দেড় বছরে ইরান থেকে আনা ৩৯টি কোচ দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হিসাবে পড়ে ছিল। এ কোচগুলো ডাম্পিংয়ে রেখে স্ক্র্যাপ আকারে বিক্রির উদ্যোগ নিলেও পরে ওয়ার্কশপে নিয়ে ২৪টি কোচ মেরামত করা হয়।
এদিকে কোচ মেরামতের হার বাড়লেও কারখানার জনবল সংকট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্কশপে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা এক হাজার ৭১১টি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় লোকবল কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে সর্বমোট ৯৮০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। যা মঞ্জুরীকৃত পদের মাত্র ৫২ শতাংশ। কারখানাটিতে ২০২০ সালে আরও ৭২ জন শ্রমিক বা দক্ষকর্মী অবসরোত্তর ছুটিতে চলে যাবেন। এমতাবস্থায় ওভারটাইম-সহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে কোচ মেরামতের হার বাড়লেও এই মূহূর্তে বড় বাধা লোকবল সংকট।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৪৭ সালে পাহাড়তলীতে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে এক সময় নতুন কোচ নির্মাণ হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবহেলার কারণে রেলওয়ে কোচ মেরামত ছাড়াও নতুন কোচ নির্মাণে অনাগ্রহী ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ওয়ার্কশপ আধুনিকায়নের পাশাপাশি কোচ মেরামত-সহ ওয়ার্কশপ থেকে দ্রæত সময়ের মধ্যে কোচ সরবরাহ তৎপরতা শুরু করে রেল। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্কশপের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিদিন একটি কোচ মেরামত হলেও বর্তমানে দৈনিক গড়ে দুটি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। এক সময় অপেক্ষায় থাকা কোচগুলো দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও মেরামত করা হতো না। এখন ছয় মাসেই প্রতিটি কোচ মেরামত করা হয়। চলমান সংস্কার প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পাহাড়তলীতে অবস্থিত এ কারখানার কর্মদক্ষতা আরও বাড়বে।
রেলওয়ে ওয়ার্কশপ শ্রমিক শেফায়েত জানান, ‘রেলের আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি এসেছে। পুরো ওয়ার্কশপ সংস্কার করায় কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আগে ওয়ার্কশপে বৃষ্টি হলেই পানি পড়তো এখন সে পরিস্থিতি নেই। প্রতিদিন কোচ মেরামতসহ নানা কর্মকান্ড চলছে ওয়ার্কশপে। তবে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় কিছু। যদিও এসব কাজের ওভারটাইম পাওয়া যায়।’