ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি

82

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহব্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলাম, সদস্য সচিব করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সংগঠনটির সদস্য হওয়ার নতুন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ বছর।’
এদিকে, যুবলীগের বৈঠক শেষে গণভবনে প্রেসব্রিফিংয়ের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামকে আহব্বায়ক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস হবে। তার আগ পর্যন্ত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিই সংগঠনের সব কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
যুবলীগের বৈঠক সূত্র জানায়, ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বৈঠকে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শহীদ সেরনিয়াবত। তাকে সমর্থন করে বক্তব্য দেন সুব্রত পাল, আমির হোসেন গাজী, নিলিখ রঞ্জন গুহ, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, বেলাল হোসেন, ফারুক হাসান তুহিন প্রমুখ।
সূত্রটি আরও জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহব্বায়ক ও সদস্য সচিবের উদ্দেশে বলেন, বিতর্কিত ও অভিযুক্ত কেউ যেন কোনও পদে না থাকতে পারেন। সম্মেলনের জন্য যেসব সাব কমিটি করা হবে, তাতেও যেন এদের কেউ স্থান না পান।
বৈঠক সূত্র জানায়, ওমর ফারুক চৌধরীর একক কর্তৃত্বে যুবলীগে বিতর্কিতদের পদ দেওয়া, কমিটি ভাঙা, নতুন কমিটি গঠন, বিতর্কিত নেতাদের প্রশ্রয় দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে অভিযোগ তুলে ধরেন শহীদ সেরনিয়াত। পাশাপাশি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের ওপরও এসব দায় বর্তায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত যুবলীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এসব অভিযোগ আগে জানানো উচিত ছিল।
সূত্র জানায়, যারা দলীয় পদ ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে অর্থ-বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘কারও অপকর্মের দায় দল ও সরকার নেবে না। যারা অপকর্ম করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, তাদের ছাড়া হবে না। কারও অন্যায় কর্মকান্ডের কারণে দল ও সরকারের দুর্নাম হতে দেবো না। কারও কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে না। আমার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও আদর্শ কারও অপকর্মের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেবো না।
প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ ওঠে। এ সময় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
অভিযানের সময় দুর্নীতি ও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট যুবলীগ নেতাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তার দেশত্যাগেও। ।
এদিকে, ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই গত ১২ অক্টোবর (শুক্রবার) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠটির সভাপতিমন্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে যুবলীগের তৎকালীন চেয়াম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে পদ পাওয়াসহ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। এরপর ২০১২ সালে যুবলীগের ষষ্ঠ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আগপর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।