ওই পুরনো ‘ট্যাবলেটে’ আর কাজ হবে না

32

ভারতবিরোধিতার মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বিএনপি সর্বশেষ চুক্তিগুলোর বিরোধিতা করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর যে কয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, তার প্রতিটি ধরে ধরে বাংলাদেশের স্বার্থের দিক তুলে ধরেছেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলছেন, বিএনপি নেতারাও এই বিষয়গুলো বোঝেন। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর নয়া দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই, এর মধ্যে চারটি চুক্তি ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ বলে অভিযোগ করছে বিএনপি।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওই চুক্তিগুলো নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ভারত সফর নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি করেছেন। প্রত্যেকটি চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশের স্বার্থ শুধু সংরক্ষণ নয়; বরং ভারতের কাছ থেকে আমরা স্বার্থ আদায় করেছি। খবর বিডিনিউজের
এবারের চুক্তিগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়, যার সমালোচনা করছে বিএনপি।
এ বিষয়ে আলোচনায় সিঙ্গাপুর এখন এত সমৃদ্ধ দেশ কীভাবে হল, সে প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর সমৃদ্ধ দেশ হয়েছে মূলত সিঙ্গাপুর বন্দরকে বিশ্বের দেশগুলোর জন্য খুলে দেওয়ার কারণে। এখন যদি ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে। আমাদেরকে তো মাশুল দিতে হবে। তাদের জাহাজে যতগুলো পণ্য আসবে সেটার জন্য মাশুল দিতে হবে। সেটি পরিবহনের জন্যও আমাদের মাশুল দিতে হবে।
এই সহজ বিষয়টা বিএনপি নেতারা যে বোঝেন না তা নয়, বোঝেন। বুঝেও জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কথাগুলো বলেন।
উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়েরও সমালোচনা করছে বিএনপি।
এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে রাডার নিয়ে ভুল ও অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। এর আওতায় ভারত ২০টি রাডার কেনার জন্য অনুদান দেবে, যেটি আমাদের ফেরত দিতে হবে না।
সেই অনুদান দিয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য ২০টি রাডার কেনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোস্টগার্ডের ভালো রাডার সিস্টেম নেই। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের জাহাজ এসে মাছ চুরি করে নিয়ে যায়।
ভারত থেকেও মাঝেমধ্যে আসে, আসে না যে তা নয়।
এই রাডার সিস্টেমের মালিকানা ও পরিচালনা বাংলাদেশই করবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সুতরাং এটি নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে সেটি অত্যন্ত অমূলক।
ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় সরিয়ে নেওয়ার চুক্তির সমালোচনার জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, পুরো প্রবাহের দুইশ ভাগের এক ভাগ পানি সাবরুম একটি এলাকা, ছোট্ট শহর, সেখানে যাবে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।
এখনও যে তারা (ভারত) পানি নেয় না, তা নয়। এখন বরং সেটিকে একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনা হয়েছে। এতদিন সেখান থেকে পানি অবৈধভাবে উত্তোলন হত। এগুলি সবই অর্থনীতির স্বার্থে করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি আমদানির সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কঠোর সমালোচনা করেন হাছান মাহমুদ।
এলপিজি কীভাবে হয় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, খন্দকার মোশাররফ সাহেব তো ‘সয়েল সায়েন্সের’ অধ্যাপক ছিলেন। উনি নিশ্চয়ই বুঝেন, নাকি বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পরে উনি মূর্খ হয়ে গেছেন আমি জানি না, কারণ যেভাবে কথা বলছেন মূর্খরাও এভাবে বলে না।
এলপিজি বাংলাদেশে প্রধানত দুটি খাত থেকে আসে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটি হচ্ছে আমাদের দেশে সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ টন এলপিজি আমদানি হয়। বাল্কে আমদানি হয় যেগুলো আমাদের দেশে বেসরকারিভাবে কয়েকটি ‘প্ল্যান্ট’ সেগুলোকে বোতলজাত করে এবং সারা দেশে বিতরণ করা হয়।
আরেকটি মাধ্যমে হচ্ছে, আমরা যে ‘ক্রুডওয়েল’ আমদানি করি যেটি চট্টগ্রামে পরিশোধিত করা হয়। সেখান থেকে উপজাত হিসেবে নেপতা হয় আর এলপিজি হয়।
আমরা যে এলপিজি আমদানি করছি, সেটাকে ‘ভ্যালু অ্যাড’ করে, আমরা সেটি রপ্তানি করব। এটিতো আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক। আমাদের এক্সপোর্ট বাস্কেটে আরেকটি পণ্য যোগ হল।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটিকে তারা (বিএনপি) প্রথম বলল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করারতো প্রশ্নই আসে না। কারণ আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাচুর্য নেই।
সুতরাং এই বিষয়গুলো বিএনপি নেতারা বুঝেও জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই কথাগুলো বলছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ভারতবিরোধিতা, সেটিকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
তবে এই পুরনো ট্যাবলেট আর কাজ করবে না। বিএনপির এই পুরনো ভারতবিরোধিতার যে ট্যাবলেট, এই ট্যাবলেট আর কাজ করবে না।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রিজভী সাহেবরাতো প্রতিনিয়তই বলেন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য খুব খারাপ। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক ডাক্তার, না রিজভী সাহেবরা ডাক্তার- এটা বোঝা মুশকিল।
রিজভী সাহেবদের কথায় মনে হয়, উনারাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ওনারা কিছু দিন পর পর বলেন যে, খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব খারাপ। খালেদা জিয়ার কিছু সমস্যা আছে যেগুলো খুব পুরনো এবং সেগুলো বয়স বাড়ার কারণে হয়। যে কোনো মানুষের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বাড়ে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেই পুরনো সমস্যাগুলোই খালেদা জিয়ার আছে। সেজন্য তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের মতো জায়গায় রাখা হয়েছে। যেটি দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা বিদ্যাপীঠ এবং দেশের বড় বড় চিকিৎসকরা সেটির সাথে সংযুক্ত।
সুতরাং এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা তারা সব সময় করে আসছে। সুতরাং রিজভী সাহেবের বক্তব্য সেটার ধারাবাহিকতা ছাড়া আর অন্য কিছু না।