এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভ কামনা

229

আজ দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সাধারণ শিক্ষা বোর্ড. মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে এগারোটি বোর্ড এ পরীক্ষার আয়োজন করছে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এরমধ্যে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন ছাত্রী এবং ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন ছাত্র। দেশের তিন হাজার ৪৯৭টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৬৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবার মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসবেন। বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৪৩৪ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। বিশাল এ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরিসংখ্যা আমাদের আশাবাদি করে তুললেও জাতীয় একটি দৈনিকে গত দুই বছর আগে সারা দেশে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন করে ৫ লাখের অধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেনা বলে খবর দিয়েছে। এ সংবাদটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুখকর নয়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষা হচ্ছে মূল চাবিকাঠি। সরকার বিগত কয়েকবছরে প্রাথমিকে ঝরেপড়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করেছে। মাধ্যমিকে নিয়মিত শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া এ বিশাল অংশ আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার মুল লক্ষ্যে ব্যাঘাত ঘটাবে। এ বিষয়ে সরকারকে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। ঝরেপড়ার সংখ্যা দ্রুত কমাতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই শিক্ষাবোর্ড থেকে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২২১ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৪৬ জন বেড়েছে। এবছর চট্টগ্রামে মোট ১৯০টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বাড়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের সংখ্যাও ১১টি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৮ সালে ১ হাজার ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৩০টি হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে প্রশ্নপত্রের বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশ ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। তবে কোন পরীক্ষার্থী দেরিতে কেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাকে উপযুক্ত কারণ দর্শাতে হবে। প্রশ্নের সেটও লটারির মাধ্যমে ২৫ মিনিট আগে নির্ধারণ করা হবে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে দেশের সকলপ্রকার কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এসময়ে কোন কোচিং সেন্টার খোলা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরকারি গোয়ান্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের সাধনার এ পাবলিক পরীক্ষাকে বিতর্কিত করার যেকোন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত প্রতিহত করতে সরকার উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবারে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না বলেই আশা প্রকাশ করছেন। মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, গত বছর যে পদ্ধতিটা অনুসরণ করা হয়েছিল সেই পদ্ধতি কার্যকর হয়েছিল এবং গত বছর কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এ বছর আমরা সেই পদ্ধতিটিকে আরও জোরদার করেছি। কাজেই আমরা আশা করছি যে, এ বছর কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। শিক্ষামন্ত্রী এও বলেছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে অতীতে যা রটেছে তার অধিকাংশই গুজব। তিনি গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। পরীক্ষা নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা আপাতত যথেষ্ট বলে মনে করি আমরা। আশাকরি, পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে আন্তরিক ও কর্তব্যনিষ্ঠ হবেন। আমরা পরীক্ষার্থীদের সফলতা ও সুস্থতা কামনা করছি।