এলাকায় গিয়ে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু এলএ শাখার

134

চট্টগ্রাম-ফেনী গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনে সীতাকুন্ড অংশে অধিগ্রহণ করা ভূমি মালিকদের ৩১২ কোটি টাকার চেক এলাকায় গিয়ে বিতরণ করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আবেদন গ্রহণও শুনানিএলাকায় গিয়ে করবেন তারা। এজন্য অন্তত চারটি টিমও গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চেক বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তিন কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সকল প্রকল্পেও একই পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। প্রথম ধাপে এ কার্যক্রম আগামি ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত চলবে।
জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের চেক বিতরণ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর এলএ শাখার সাবেক চেইনম্যান ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসের কর্মচারী নজরুল ইসলামকে শপিং কমপ্লেক্সস্থ তার কাপড়ের দোকান আনুকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৯১ লাখ টাকার চেক ও নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পদের ৫৫ জনকে বদলি করা হয়। বদলির অপেক্ষায় আরো কয়েকজন।
এলএ শাখা সূত্রে জানা যায়, এ শাখায় বেশ ক’জন দালালের দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। তাদের মধ্যে ইকবাল, আবদুল্লাহ, ইলিয়াছসহ ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে।তাদের কথা ছাড়া চেক ইস্যু করা অসম্ভব। তাদের অনেকেই শত কোটি টাকার মালিক।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের অধীনে এলএ মামলা নং ৭/২০১৭-১৮ এর সীতাকুন্ড এলাকার অধিগ্রহণকৃত ৬৮.৫০৫৫ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১২ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৪৩ টাকা। গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সীতাকুন্ডের বিভিন্ন মৌজার আবেদনকারীরা ১১২ কোটি ৫৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৯৩৩ টাকার চেক উত্তোলন করেছেন। বাকি প্রায় ৩১২ কোটি টাকা মৌজা এলাকায় শুনানি শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আমিরুল কায়ছার।
এ প্রকল্পের অধীনে এলএ মামলা নং ৮/২০১৭-১৮ মূলে মিরসরাই অংশে ৫৫.০৮৩১ একর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১২০ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫ হাজার ১০৯ টাকা, এলএ মামলা নং ১৭/২০১৭-১৮ মূলে বাঁশখালী-আনোয়ারা অংশে মোট ৮৬.৭৪৭৫ একর জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ২০১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এলএ মামলা নং ১৫/২০১৭-১৮ মূলে আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট অংশে ২৪.২৪২৫ একর জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতি-পূরণ এখনো নির্ধারণ করেনি সরকার।
অর্থ পরিশোধের অংশ হিসেবে গত ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার ভাটিয়ারী মৌজার শুনানি গ্রহণ করা হয় ইউনিয়ন পরিষদে। শুনানির জন্য ১০২ জনকে টোকেন দেয়া হয়। এর মধ্যে ৯৩ জনের শুনানি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সাড়ে তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। ২৪ নভেম্বর রোববার শীতলপুর মৌজার শুনানি সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে, ২৫ নভেম্বর সোমবার বাঁশবাড়িয়া মৌজার শুনানি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার উত্তর ছলিমপুর মৌজার শুনানি উত্তর ছলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে এবং ২৭ নভেম্বর বুধবার আমিরাবাদ মৌজার শুনানি সীতাকুÐ উপজেলা ভ‚মি অফিসে অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা অস্থায়ী অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আমিরুল কায়ছার জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে সীতাকুন্ড থেকে প্রথম ধাপে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করা হয়েছে। এ প্রোগ্রামের আওতায় জেলা প্রশাসনের ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার ও অফিস সহকারীর সমন্বয়ে গঠিত নয় সদস্যের ৪টি টিম নির্দিষ্ট মৌজায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে বা সুবিধাজনক স্থানে অস্থায়ী অফিস করবেন। সেখানে আবেদনকারীগণের উপস্থিতিতে (পক্ষদ্বয়ের) আবেদন দেখে জমি পরিদর্শনের পর শুনানি শেষে প্রতিবেদন প্রদান করবেন এবং প্রতি বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ভূমির ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চেক বিতরণ করবেন।
তিনি বলেন, অধিগ্রহণকৃত ভূমির মালিকদেরকে শুধুমাত্র আবেদন করার জন্য জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় একবার আসতে হবে। এখন থেকে সেবা আবেদনকারীগণকে এলএ শাখায় এসে বসে থাকতে হবে না। এলএ অফিস সেবা প্রত্যাশীদের কাছেই যাবে। ডিসেম্বর থেকে অন্য প্রকল্প এলাকাতেও এ প্রোগ্রাম চলবে। দালালদের তৎপরতা রোধসহ ভূমির মালিকদের কষ্ট লাঘবে জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ।
তিনি আরো জানান, শিডিউল অনুসারে চারটি টিমের প্রতিটিতে নয়জন করে সদস্য মৌজা এলাকায় গিয়ে সেবা দিবেন। ইতোমধ্যে সীতাকুন্ডের বিভিন্ন মৌজায় অধিগ্রহণকৃত ভূমির মালিকদের জ্ঞাতার্থে মাইকিং করে প্রচারণার পাশাপাশি নোটিশ প্রদান করা হচ্ছে।
ভ‚মি অধিগ্রহণ শাখা সূত্র জানায়, সীতাকুন্ডের এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের বিপরীতে এখন থেকে নতুনভাবে যত আবেদন হবে সব অস্থায়ী অফিসেই জমা নিবে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম। টিমে একজন ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, একজন অতিরিক্ত ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, একজন কানুনগো, ৫ জন সার্ভেয়ার ও একজন অফিস সহকারী দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে কর্মপরিধি নির্ধারণ করে ছয়টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা জানান, সেবাপ্রার্থীরা এলএ শাখায় এসে সময় নষ্ট করুক তা আমরা চাই না। এখন থেকে এলএ অফিসের নির্ধারিত টিম সেবা প্রার্থীদের কাছে যাবে। এতে হয়রানি যেমন কমবে ঠিক তেমনি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধ হবে।