এম ওসমান গণি (১৯১২-১৯৮৯)

90

শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী। উচ্চ শিক্ষা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে এম ওসমান গণির মৌলিক অবদান রয়েছে। তাঁর জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার গজাদিয়া নামক গ্রামে। স্থানীয় স্কুলেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বৃত্তি লাভ করেছেন। প্রথম ভারতীয় মুসলমান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগ থেকে ১৯৩৫ সালে এম.এসসি-তে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৩৮ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এম ওসমান গণি ১৯৩৯ সালে বঙ্গীয় সরকারের কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৪-১৯৪৫ সালে তিনি যুদ্ধোত্তর কৃষি পুনর্গঠনের বিশেষ কর্মকর্তা ও সচিব-এর দায়িত্ব পালন করেন। ড. গণি তাঁর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসন সংক্রান্ত প্রচুর দায়িত্ব পালন করেন, যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও ভূতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোষ্ট (১৯৪৯-১৯৫৬); পাকিস্তান সরকারের কৃষি উন্নয়ন কমিশনার (১৯৫৬-১৯৫৯); খাদ্য ও কৃষি কমিশনের সদস্য (১৯৫৯-১৯৬০); পাকিস্তান কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিয়াল রিসার্চ-এর উত্তরাঞ্চলীয় গবেষণাগার সমূহের পরিচালক (১৯৬০-১৯৬১) ইত্যাদি। ১৯৬১ সালে অধ্যাপক গণি পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)-এর প্রথম উপাচার্য মনোনীত হন এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপক গণি ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তান একাডেমী অব সায়েন্সেস (বর্তমান বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী)-এর একজন ফেলো (১৯৫৪) ছিলেন এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
অধ্যাপক এম ওসমান গণি মৃত্তিকা ও সার, উদ্ভিদ ও প্রাণীর পুষ্টি, মৃত্তিকা ফসফরাসের বিভাজন, মৃত্তিকায় ফসফেট আবদ্ধকরণের প্রক্রিয়া, মৃত্তিকায় ফসফরাসের পর্যাপ্ততা ও এর নির্ণায়ক এবং সার প্রয়োগে অবস্থার পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। দেশি ও আন্তর্জাতিক বহু বিজ্ঞান জার্নালে তাঁর গবেষণাকর্মের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষা ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক গণি পাকিস্তান সরকারের ‘সিতারা-ই-কায়েদ-ই-আজম’ (১৯৫৯) ও ‘সিতারা-ই-পাকিস্তান’ (১৯৬৪) খেতাবে ভূষিত হন এবং আমেরিকার নর্দার্ন কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিএসসি ডিগ্রি (১৯৬৭) প্রদান করে। তিনি ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এম ওসমান গণি ১৯৮৯ সালের ২১ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : বাংলাপিডিয়া