এমপি মোস্তাফিজকে ক্ষমা চাইতে হবে

124

বাঁশখালী আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান কর্তৃক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে গালাগালের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এমপি’র বিরুদ্ধে আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
এমপি মোস্তাফিজ তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে কর্ণফুলীর উপর দিয়ে বাঁশখালী যেতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত সোমবার রাতে মইজ্জ্যারটেক এবং গতকাল মঙ্গলবার সকালে কলেজ বাজার এলাকায় মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ, প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। এ সময় তারা মোস্তাফিজকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান।
তারা বলেন, ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাকে কর্ণফুলীর উপর দিয়ে বাঁশখালী যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবুকে নিয়ে কটূক্তি এবং দলের সাধারণ সম্পাদককে গালিগালাজ করায় দ্রুত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
সমাবেশে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং স্থানীয় হাজার হাজার লোকজন অংশ নেন।
এদিকে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি বলেন, এমপি মোস্তাফিজ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গালিগালাজ ও প্রায়াত নেতা আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবুকে নিয়ে বক্তব্য অবমাননাকর এবং দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে তিনি মোস্তাফিজকে সংসদ এবং দল থেকে বহিষ্কার দাবি করেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি এমপি মোস্তাফিজের বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর আনোয়ারা এবং কর্ণফুলীর লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কর্ণফুলীর কলেজ বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ব্যারিকেড দেয় উপজেলা ছাত্রলীগ। এতে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাইফুদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ নেতা সাইফুদ্দিন বলেন, সড়কে ব্যারিকেড দেয়ার এক ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে তা তুলে নেয়া হয়। তবে আমরা মহাসড়েক অবস্থান নিয়ে বসে আছি। যতক্ষণ এমপি মোস্তাফিজ ক্ষমা না চাইবেন ততক্ষণ মহাসড়ক পাহারা দেব তাকে প্রতিরোধ করার জন্য।
এ সময় বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগ নেতা নাইম উদ্দিন, শাকিল আহমদ, আতিকুল ইসলাম জুয়েল, মইন উদ্দিন, মোহাম্মদ ইমরান, সিফাত তালুকদার, নেজাম উদ্দিন নয়ন, মো. মিজান, ইসহাক, মোহাম্মদ মহিউদ্দীন, জাবেদ ইকবাল, তানভীর, সাদেক, ইমন শিকদার, সাইফুল, সাইফ, ইমন তালুকদার, নাইম, নেজাম, শাওন, আরফাত, ইকসান, ইমন, আকাশ প্রমুখ।
এদিকে উপজেলার মইজ্জ্যারটেক গত সোমবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে মইজ্জ্যারটেক আখতারুজ্জামান চত্বর প্রদক্ষিণ করে একটি মিছিল।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোহাম্মদ সোহেল, ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সাজিদ, নুরুল হক চৌধুরী, চরপাথরঘাটা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আরমান হায়দার প্রমুখ।
ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হক বলেন, এমপি মোস্তাফিজের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ ও এর সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সম্মানের প্রতি আঘাত করেছেন। বাঁশখালী আসনের সাংসদের কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা ও অশ্লীল বক্তব্যের জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি করছি।
কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর মাহমুদ জানান, বাঁশাখালীর এমপি’র ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কর্ণফুলীতে লোকজন বিক্ষোভ করছেন। ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন লোকজন মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয়ার সংবাদ পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এরপর তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
তিনি বলেন, এমপি এ সড়ক দিয়ে বাঁশখালী গেলে আঘটনের আশঙ্কা আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এমপি সাহেব বাঁশখালী যাওয়ার আগে পুলিশকে অবগত করলে সে ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তার জন্য কর্ণফুলী থানার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এ সময় নেতাকর্মীরা এমপি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রাসেল।
উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আখতারুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ সভাপতি নুরুল আবছার শাহ, যুগ্ম সম্পাদক এমএ মান্না, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল হক সুমন। উপস্থিত ছিলেন শহিদুল ইসলাম সাজ্জাদ, আবদুর রহিম, মো. হান্নান, ফোরকানুল হক চৌধুরী, মো. মনছুর, ওসমান সরোয়ার খোকন, তৌহিদ ও আরজু প্রমুখ।
পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল চাতরী চৌমুহনী বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।