‘এমপিনির্ভর’ যুবলীগ!

67

কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূলে দ্রুত কমিটি গঠন শেষ করতে চায় যুবলীগ। এরই অংশ হিসেবে যেসব ইউনিট সাংগঠনিক কার্যক্রমে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যকে। পাশাপাশি নগর যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রাধান্য দিতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। সংগঠনের নেতাদের পরিবর্তে সাংসদদের প্রতি এমন নির্ভরতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে নগর আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে বিষয়টি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছেও জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেতারা যুবলীগের কেন্দ্র থেকে দেয়া নির্দেশনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, যাদের যুবলীগ করার এখতিয়ার নাই তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া মানে বিশৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দেয়া। বিশৃঙ্খলার জন্য দলীয় ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হলে এর দায়দায়িত্ব কে নিবে। এসবের প্রেক্ষিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রার্থনা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী-সম্পাদক বরাবরে কাছে চিঠি লিখেছি। হয়তো নেত্রী বিদেশ থেকে আসলেই এ বিষয়ে নির্দেশনা পাবো।’
দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগর যুবলীগের তিন কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকলেও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নিজেদের ব্যর্থতা থাকায় কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক এবং উত্তর ও নগর যুবলীগের সমন্বয়ে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুকে দায়িত্ব দিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরের ওয়ার্ড কমিটি গঠনে এমপিরা যে কমিটি জমা দিবেন সেটিই অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় যুবলীগের এ সিদ্ধান্তে নগর যুবলীগে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, সংসদ সদস্যরা কমিটি করলে সেখানে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের ঠাঁই দেয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী এসব কমিটিতে উপেক্ষিত হবেন।
ওয়ার্ড কমিটি গঠনে এমপিদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় যুবলীগের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করেন তাই করেছেন। আমরা যেহেতু ওয়ার্ড কমিটি করতে পারি নাই সেহেতু সম্মেলন দ্রুত করতে এ পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। তা নিয়ে এলাকায় স্বাভাবিকভাবে একটু প্রভাব পড়বে। কারণ সব এমপিতো সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় নন। দীর্ঘদিন ধরে যারা যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তারা এখন কমিটিতে আসা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। শুনেছি নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন হলে ভালো হতো।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাতেও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ লক্ষ্যণীয়। সম্প্রতি গঠিত পটিয়া ও আনোয়ারা যুবলীগের কমিটি সরাসরি কেন্দ্র থেকে গঠন করা হয়েছে। এ দুই কমিটিতেই সংসদ সদস্যদের পছন্দের ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্পাদকমন্ডলীর দুই নেতা বলেন, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। পটিয়া ও আনোয়ারার কমিটি নিয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি টিপু সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথীর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। এতে সাংসদের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা অনেকেই অবমূল্যায়িত হয়েছেন। এর আগে লোহাগাড়া যুবলীগের কমিটিও অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাকে কোনোধরনের কমিটি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আমি শুধু সম্মেলনের জন্য কাউন্সিলরদের তালিকা সংগ্রহ করছি। এ তালিকা সংগ্রহে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক, মন্ত্রী-এমপি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সাথে কথা বলেছি। তারা এখনো আমার কাছে তালিকা পাঠাননি। তবে আগামী সপ্তাহে জমা দিতে পারবো বলে আশা করছি। কেন্দ্রের কমিটি করার বিষয়টি আমি যতটুকু জানি জেলা সভাপতি-সম্পাদক অবগত আছেন এবং তাদের সমন্বয়েই কমিটি হয়েছে। জেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে কোনোরকম দ্ব›দ্ব আছে বলে আমার মনে হয়নি। তারা দুইজনই আমার কাছে একসাথে এসেছিল। দ্ব›দ্ব থাকলে ওরাই বলতে পারবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ন ম টিপু সুলতান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, কাউন্সিলরের তালিকা আমরা ঢাকার বৈঠকে জমা দিয়েছি। এরপরেও কেন্দ্র সমন্বয়ের জন্য মাহমুদুল হক ভাইকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা যেন কোনো কমিটি না দিই সেজন্য কেন্দ্র নির্দেশনা দিয়েছে। এমপিরা যেরকম কমিটি প্রস্তাব করবেন সেভাবেই যেন অনুমোদন দেয়া হয়। এমপিরা কমিটি নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রে চলে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ন ও ফলোআপের জন্য বাচ্চু ভাইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলর তালিকা আমরা উপজেলা থেকে সংগ্রহ করে উনার হাতে দিয়েছি। আমাদের সাথে এমপিদের সমন্বয়হীনতা নেই। আমরা মিরসরাইয়ের আহব্বায়ক কমিটি মোশাররফ ভাইয়ের সাথে কথা বলে দিয়েছি। আমাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নেই। সবগুলো সম্মেলনে এমপিদের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। কারো সাথে আমাদের দ্বন্দ্ব নেই। লাইকিং, ডিসলাইকিং আছে। কিন্তু রাজনৈতিক শিষ্টাচার আছে উত্তর জেলায়।’