এমএ সালাম সভাপতি আতাউর সম্পাদক

74

সমঝোতা নয়, ভোটাভুটিতেই উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব বাছাই করেছেন কাউন্সিলররা। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি পদে এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কাউন্সিল অধিবেশন শেষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এ দুইজনের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্র জানায়, সভাপতি পদে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও এমএ সালামের মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হয়। ভোটাভুটিতে সভাপতি পদে বিজয়ী এমএ সালাম পেয়েছে ২২৩ ভোট ও এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছে ১২৯ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী শেখ আতাউর রহমান পেয়েছেন ১৯৬ ভোট এবং গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ১৫৪ ভোট।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি এমএ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের সহযোগিতায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা ভোট দিয়েছেন বা যারা দেননি সবাইকে নিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করবো। আমাদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরামর্শে শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।’
নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরাতো দলপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী। দলকে গড়ে তুলতেই দায়িত্ব নিই। দল করে সুবিধা নিতে চাই না। পদ-পদবী চাওয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দলকে সেবা দেয়া। শেখ হাসিনার সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে সে চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র মোকাবেলাই আমার পদ প্রাপ্তির লক্ষ্য। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে যেসব সাংগঠনিক সংকট আছে সেগুলো নিরসন করবো। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতির যে ঐতিহ্য আছে সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবো।’ তিনি বলেন, ‘আমি হঠাৎ করে জেলার রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি তা কিন্তু নয়। আমি দীর্ঘদিন জেলার রাজনীতি করেছি। পদেও ছিলাম। মাঝখানে মিরসরাইয়ের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম। ছাত্রলীগ করেই আমার রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা।’
এদিকে এমএ সালাম ও শেখ আতাউর রহমানের বিজয়কে তৃণমূলের বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের রাজনীতির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকার পুরস্কার পেয়েছেন এই দুই নেতা। বিজয়ীদের মধ্যে এমএ সালাম দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী শেখ আতাউর রহমান ১৯৯২ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির বিভিন্ন পদে ছিলেন।
ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে সালাম : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্কুলছাত্র থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি এমএ সালামের। যুদ্ধকালীন সময়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাদ্য ও বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য, ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য ও ১৯৮০ সালে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রথমবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এমএ সালাম। ১৯৯৬, ২০০৪ ও ২০১২ সালে আরো তিনবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সামরিক স্বৈরশাসন, সাম্প্রদায়িকতাসহ দুঃশাসন বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৮১ সালে কারাবন্দিও হন। স্বৈরশাসনামলে অসংখ্যবার মৃত্যুর মুখোমুখি হন সালাম। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ভরপুর এমএ সালামের সংসদ সদস্য হওয়ার অপূর্ণতা থাকলেও ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি পুরো জেলায় সরকারের উন্নয়নের সারথী হন সালাম।
সমাজসেবাতেও দক্ষ আতাউর : ১৯৭২ সালে বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রবস্থায় সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেই রাজনীতি শুরু করেন শেখ আতাউর রহমান। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে নিজামপুর কলেজের যুগ্ম আহবায়ক, ১৯৭৮ সালে সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮০ সালে নিজামপুর কলেজ ছাত্র সংসদ ভিপি, ১৯৮০-৮২ সালে মিরসরাই থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৩ সালে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ১৯৮৬-৯০ সালে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৮-৯২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ১৯৯২-২০০৪ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, ২০০৪-২০১২ সাল উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ২০১২-২০১৯ সাল পর্যন্ত মিরসরাই আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও একজন মানুষ গড়ার কারিগর ছিলেন আতাউর রহমান। রাজনীতির জন্য ছেড়ে দেন শিক্ষকতা। রাজনীতির পাশাপাশি এখন পুরোদমে সামাজিক ও শিক্ষাবান্ধব কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িত করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঝুঁকি নিয়েও দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিবিদ।