এমএজি ওসমানী (১৯১৮-১৯৮৪)

434

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তার পুরো নাম মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর, সুনামগঞ্জে। ১৯৩৯ সালে তিনি রয়েল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার হিসেবে বার্মা সেক্টরে কাজ করেন। ১৯৪২ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ সালে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন। সে বছর ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল সার্ভিসের জন্যও মনোনীত হন। কিন্তু সামরিক বাহিনীতেই থেকে যান তিনি। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভাষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ঘোষণা করেন। ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। ১২ এপ্রিল থেকে তিনি মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার নেন। রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে প্রাক্তন ইপিআর-এর বাঙালি সদস্য, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ বাহিনী ও যুবকদের নিয়ে একটি গণবাহিনী বা গেরিলাবাহিনী গঠন করেন। সবশেষে সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন নৌ ও বিমানবাহিনী গঠন করেন। পাকিস্তানী বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী অনুপস্থিত ছিলেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ হিসেবে আর্মি প্রটোকলের কথা উল্লেখ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নেন তিনি। ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রবর্তন করা হলে সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন তিনি। ওই বছর ২৯ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার স্মরণে ঢাকায় গড়ে উঠেছে ‘ওসমানী উদ্যান’ ও স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’। এ ছাড়া তার সিলেটের বাসভবনকে পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে। সরকারি উদ্যোগে সিলেট শহরে তার নামে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি লন্ডনে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তার পুরো নাম মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর, সুনামগঞ্জে। ১৯৩৯ সালে তিনি রয়েল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার হিসেবে বার্মা সেক্টরে কাজ করেন। ১৯৪২ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ সালে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন। সে বছর ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল সার্ভিসের জন্যও মনোনীত হন। কিন্তু সামরিক বাহিনীতেই থেকে যান তিনি। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভাষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ঘোষণা করেন। ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। ১২ এপ্রিল থেকে তিনি মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার নেন। রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে প্রাক্তন ইপিআর-এর বাঙালি সদস্য, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ বাহিনী ও যুবকদের নিয়ে একটি গণবাহিনী বা গেরিলাবাহিনী গঠন করেন। সবশেষে সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন নৌ ও বিমানবাহিনী গঠন করেন। পাকিস্তানী বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী অনুপস্থিত ছিলেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ হিসেবে আর্মি প্রটোকলের কথা উল্লেখ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নেন তিনি। ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রবর্তন করা হলে সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন তিনি। ওই বছর ২৯ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার স্মরণে ঢাকায় গড়ে উঠেছে ‘ওসমানী উদ্যান’ ও স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’। এ ছাড়া তার সিলেটের বাসভবনকে পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে। সরকারি উদ্যোগে সিলেট শহরে তার নামে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।