এবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করবে বিটিসিএল মরার ওপর খাঁড়ার ঘা

79

চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) রাস্তা কাটছে এবং এ প্রক্রিয়া চলবে ২০৪০ সাল পর্যন্ত। শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের এ খোঁড়াখুঁড়ি। ইতোমধ্যে প্রায় ৬শ সড়কে চলছে এমন দুর্ভোগের কর্তন। চলবে আরও সমানসংখ্যক সড়কেও। এ নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
খোঁড়াখুঁড়ির ফলে বৃষ্টিহীন সড়কে অসহনীয় ধুলার যন্ত্রণা আর বৃষ্টিতে গর্তগুলো পরিণত হয় মৃত্যুক‚পে। তাছাড়া কর্দমাক্ত সড়কে বাড়াচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ওয়াসার রাস্তা কাটার তীব্রতার সাথে সড়ক সংস্কারে হিমশিম খেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে। এবার ওইসব সড়কে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করতে অনুমতি চায় বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা! তবে অনুমতি দেওয়ার আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পরামর্শ চাইবেন মেয়র নাছির। পূর্বদেশকে তিনি এমনটায় বলেছেন।
সরকার ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২০ সালে। বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণে ৭৯৩ কিলোমিটার পথে বসানো হচ্ছে কপার ক্যাবল। এছাড়া এ প্রকল্পের অধীনে বিটিসিএলের বিদ্যমান টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলোর পুরনো ট্রান্সমিশন ব্যবস্থার সব যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন, বিদ্যমান কপার বেইজড কোর ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল দিয়ে ২ হাজার ৩৬৭ কিলোমিটার প্রতিস্থাপন, ১০০ জিবিএস ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকবোন ইক্যুইপমেন্ট কেনা, আইপ নেটওয়ার্কের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ আরও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামেও চলবে এ কর্মযজ্ঞ।
এজন্য নগরীর প্রায় ৭৬টি সড়কের পাশ দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হবে। রাস্তা কেটে এ ফাইবার স্থাপন করা হবে বিধায় সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি চেয়েছে প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী। গত ৪ সেপ্টেম্বর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে রাস্তা কাটার অনুমতি চান তিনি।
জানা গেছে, পাহাড়তলী কলেজ সড়ক, জাকির হোসেন, বিএডিসি, কৃষ্ণচূড়া, আব্দুল হান্নান, হাবিব লেন, পশ্চিম খুলশি, আববাগান, শহীদ লেন, পাঞ্জাবী লেন, আকবরশাহ, জাকির হোসেন, ফয়েস লেক, লেকভিউ আ/এ, রোজ ভ্যালি আ/এ, ফ্লোরা পাস, দক্ষিণ খুলশি, আব্দুল মালেক সেন-১,২,৫,৬ সড়ক, বসির মার্কেট, হামজারবাগ, সুন্নিয়া মাদ্রাসা, হাসেম বাজার, পিলখানা, হামজা খাঁ লেন, বায়েজিদ বোস্তামি, অক্সিজেন কুয়াইশ, স্টাফ কলোনি, মজুশাহ মাজার গায়েবি মসজিদ, বঙ্গবন্ধু, ইয়াকুব নআলী, পলিটেকনিক, কাজী মুজাফফর আহমেদ, চৌধুরী, নুরুল আলম, তুলাতুলি, রহমান নগর, চশমা হিল আ/এ, বিসিক শিল্প নগরী, বায়েজিদ আ/এ, চত্তগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক, বিএফআইডিসি সড়ক, চাঁদমিয়া, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে আশপাশের সড়ক, কাপ্তাই মহাসড়ক, এ আর খান মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙ্গুনিয়া মহাসড়ক, মোহাম্মদপুর, সুগন্ধা, মিরজাপুল, পাঁচলাইশ, ওআর নিজাম, আব্দুল লতিফ, আব্দুল্লাহ খান, হামদুমিয়া, চত্তগ্রাম-হাটহাজারী, আব্দুল হামিদ, সিডিএ এভিনিউ, চাঁদ মিয়া, ওমর আলী মাতব্বর, খতীবের হাট, আব্দুল করিম, ফরিদের পাড়া, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে, বারইপাড়া, খাজা, নাজির পাড়া, এজি, বায়েজিদ বোস্তামি, হাজী নূর আহম্মেদ, মসজিদ লেন, হিলভিউ, কেবি ফজলুল কাদের এবং ও আর নিজাম রোডের পাশ বরাবর রাস্তা খুঁড়ে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক-২ গোলাম মোস্তাফা পূর্বদেশকে বলেন, এ প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে কাজ চলবে। সেই সাথে চট্টগ্রামেও চলবে। এখানে যে পরিমাণ সড়ক কাটা হবে, তাতে অন্তত ২ বছর ৮ মাস সময় লাগবে। আমরা মূলত এখন প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। কর্পোরেশনের অনুমতি পেলেই ১ অক্টোবর থেকে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন শুরু হবে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, এসব সড়কের সবগুলো ইতোমধ্যে ওয়াসা কর্তন করেছে। সেগুলো প্যাচ ওয়ার্কের মাধ্যমে গর্ত ভরাট করেছে সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া এসব সড়কে বেশিরভাগই প্রকল্পের অধীনে উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পথে। এ সময় আবার কর্তন করা হলে গচ্ছায় যাবে উন্নয়নের টাকা। অন্যদিকে দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কর্পোরেশনের এক প্রকৌশলী মন্তব্য করেন, সমন্বয়হীন উন্নয়নের খেশারত দিতে হচ্ছে চট্টগ্রাম। যার যেমন ইচ্ছে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে আর চট্টগ্রামকে খেলার মাঠ বানিয়ে ছাড়বে।
এমন জনদুর্ভোগের বিষয় নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এটা মূলত সামগ্রিক সমন্বয়হীনতার চিত্র। আমাদের শহরে অনেকগুলো সেবা সংস্থা কাজ করে। তাদের সমন্বয় করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। প্রকল্প নেওয়ার সময় সংস্থাগুলো কর্পোরেশনের কোন ধরনের ‘কনসার্ন, নেয় না। ফলে এমন অবস্থা তৈরি হয়। সেবাসংস্থাগুলো যদি এমন নির্লিপ্ত হয়, তাহলে তো সরকারের উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারবে না। তাই সেবাসংস্থাগুলো সিটি কর্পোরেশনের সাথে বসে এসব ঠিক করা উচিত। বিকল্প কি হতে পারে? যাতে উন্নয়নও হবে, দুর্ভোগও মাত্রারিক্ত হবে না।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ওয়াসা রাস্তা কাটছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, তাই আমরা অনুমতি না দিয়ে পারি না। রাস্তা কাটা বাবদ যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়, তাতে কখনও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। ওয়াসার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা রাস্তার সংস্কারে কাজ করছি। এখন যদি বিটিসিএল রাস্তা কাটাকাটি শুরু করে, তাহলে আমরা কোনটা ঠিক করবো? এছাড়া পিডিবিও রাস্তা কাটবে বলে জানিয়েছে। সবাই যদি একের পর এক রাস্তা কাটা শুরু করে, তাহলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে একসাথে সংস্কারের কাজ যোগান দেওয়া সম্ভব না। তাই আমরা আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইবো, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী হতে পারে?
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা কাজ করছেন। সময়ের সেরা উন্নয়ন করছেন। এখন যদি খেয়ালখুশি মত সবাই রাস্তা কাটা শুরু করেন, তাহলে মানুষ দুর্ভোগে পড়বে। আর প্রশ্নবিদ্ধ হবে সরকারের উন্নয়ন।