এবার রক্তাক্ত বান্দরবান

100

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রূপের হামলায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থী এমএন লারমা গ্রূপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো ৩ জন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭ টায় বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই বাঘমারা বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সকালে যারা বাজারে মালামাল বিক্রি করতে এসেছেস তারাও মালপত্র রেখে পালিয়ে যায়। আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। পুরো বাঘমারা ও এর আশেপাশের এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
তিন পার্বত্য জেলায় বান্দরবান এ ধরনের ঘটনা থেকে অধিকতর নিরাপদ ছিল এতদিন। এবার এখানেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল।
গুলিতে নিহতরা হলেন, জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী গ্রূপের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ সম্পাদক প্রজিত চাকমা, ডেভিড মারমা, জয় ত্রিপুরা, দীপেন ত্রিপুরা এবং মিলন চাকমা। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধরা হলেন নিরু চাকমা, বিদ্যুৎ ত্রিপুরা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেমানু মারমা। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং একজনকে কক্সবাজার মালুম ঘাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সকালে হঠাৎ করেই বাগমারা বাজার পাড়ার পশ্চিম দিক থেকে একটি সশস্ত্র গ্রূপ এলাকায় প্রবেশ করে। তারা জেএসএস সংস্কারপন্থী গ্রূপের সভাপতির বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এই ঘটনায় ৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। নিহতরা সবাই একই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। হামলার পর বেশ কিছু সদস্য পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে নিহতদের মধ্যে রতন তংচঙ্গা ও প্রজিত চাকমা ছাড়া অন্য কোনো সদস্যদের কেউ চেনেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিা।
স্থানীয়রা জানান, বাঘমারা পাড়া এলাকায় রতন চাকমার বাসায় দেড় মাস আগে অন্যান্যরা অবস্থান নেয়। এছাড়াও গত ১৩ জুন প্রথম ঐ এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রূপ হামলা চালিয়েছিল। এক মাসের মধ্যেই পুনরায় আবারও হামলার ঘটনায় সংস্কারপন্থীদের ৬ জন নিহত হয়।
গত মার্চ মাসে রতন তংচঙ্গাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট বান্দরবান জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থী গ্রূপের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি গঠনের পর থেকেই জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রূপের সাথে তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা মনে করেন- এ দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, বান্দরবানে ঘটনাটা দুই গ্রূপের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে হয়েছে। এতে ৬ জন নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন ৩ জন। আহতদের দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে কক্সবাজার মালুম ঘাটা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তিনি আরো জানান, ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের পর আপডেট জানানো হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।