এবার ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার হুমকি কাদের সিদ্দিকীর

42

সংসদে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে বিএনপির পুরনো জোটে ভাঙন দেখা দেওয়ার পর এবার নতুন জোটও ভাঙতে বসেছে। কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাতজন সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার সঠিক ব্যাখ্যা না পেলে তারা আর জোটে থাকবেন না।
২০ দলীয় জোটে আলোচনা না করে সংসদে যোগ দেওয়ার পর আন্দালিব রহমান পার্থ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) দু’দিন আগে এই জোট ছেড়েছে। বিএনপির সঙ্গে জোটে দুই দশক ধরে ছিল দলটি।
এবার নির্বাচনের আগে বিএনপি গড়ে তোলে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ জোটে কাদের সিদ্দিকীর দল ছাড়াও রয়েছে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলার পর ভোটে বিজয়ী আটজনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ঐক্যফ্রন্টের।
এর মধ্যে গণফোরামের দু’জন শপথ নিয়ে ফেললে তাদের সমালোচনায় মুখর হন বিএনপি নেতারা। কিন্তু শপথ নেওয়ার সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার মুহূর্তে বিএনপির পাঁচজনও যোগ দেন সংসদে। তারপর থেকে বিএনপি জোটের মধ্যে টানাপড়েন চলার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মতিঝিলে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের এক বর্ধিত সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পর কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই ফ্রন্টের সাতজন সদস্য শপথ নিলেন। ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় কেন এই দুর্বলতা? সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া যাচ্ছে না? এসব বিষয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে’।
নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা আজকের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামি এক মাসের মধ্যে যে যে অসঙ্গতি আছে, তা সঠিকভাবে নিরসন না হলে ৮ জুন ঐক্যফ্রন্ট থেকে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে’।
জোট শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না. মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে আমি জোটের মধ্যকার অসংহতির কথা বলেছি’।
আগের সিদ্ধান্ত বদলে সংসদে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তারা নির্দলীয় সরকার ও খালেদার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদেও দাবি তোলার সুযোগ কাজে লাগাতে চান। তবে কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যদের সংসদে যোগদানে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘যারা শপথ নিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে মীর জাফরের চাইতেও বেশি নিন্দিত হিসেবে বিবেচিত হবেন’। তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে জঘন্য নাটক হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নাটকের নজির নেই’।
এরপর শপথ গ্রহণ নিয়ে নাটকীয়তার প্রসঙ্গ তুলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কিছু সময় যেতে না যেতে গণফোরামের সুলতান মনসুর সংসদে যাওয়ার পাঁয়তারা করলেন। তাকে বারণ করা হলো, তিনি শপথ নিলেন এবং সংসদে গেলেন। জোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পরও গণফোরামের সুলতান মনসুর শপথ নিলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আবার মোকাব্বির খান শপথ নিলে ড. কামাল হোসেন তাকে ‘গেট আউট’ বলেন। পরে দেখা যায়, গণফোরামের বিশেষ সভায় মোকাব্বির খান উপস্থিত। এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মানুষ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা জবাব দিতে পারি না’। খবর বিডিনিউজের
বিএনপির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিএনপির তথাকথিত নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে প্রথম যখন একজন শপথ নিলেন, তখন তাকে বহিষ্কার করা হলো। পরবর্তীতে চারজন যখন শপথ নিলেন, তাদের স্বাগত জানানো হলো। কিন্তু মির্জা ফখরুল শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকলেন। এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে। মানুষের কাছে এসবের জবাব দিতে হয়। এসব বিভ্রান্তির অবসান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি’।
নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ‘সঠিকভাবে’ চলছে না বলে মনে করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে ফ্রন্ট সঠিকভাবে চলতে পারেনি, চলেনি। নির্বাচনী সহিংসতার শিকার যারা হয়েছেন তাদের পাশে ঐক্যফ্রন্ট সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। ৩০ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে ঐক্যফ্রন্টের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল, তাও বাতিল করা হয়’।
নির্বাচনের আগে গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ৫ নভেম্বর এ জোটে যোগ দেন কাদের সিদ্দিকী। সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার স্ত্রী ও কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সহ-সভাপতি নাসরিন সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।