এবার উত্তাপহীন মসলার বাজার

91

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মসলার দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। অথচ প্রতিবছর ঈদ এলেই সরগরম হয়ে ওঠে মসলার বাজার। এলাচ, দারুচিনি, জিরা, লবঙ্গ, পাঁচফোড়নসহ প্রায় সব মসলাপণ্যের চাহিদার সঙ্গে বাড়ে দামও। এবার কিন্তু সে অবস্থায় কিছুটা ব্যতিক্রম। ঈদকে সামনে রেখে দাম বাড়ার দীর্ঘদিনের রীতিতে প্রভাব ফেলেছে ‘করোনা ভাইরাস’। তাই ঈদের আগে নগরীর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে তেমনটা বাড়েনি মসলার দাম। তাই এক কথায় বলা যায় ‘গরম মসলার ঠাÐা বাজার’।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঈদের খুব একটা আয়োজন নেই। আবার ঈদ ছাড়াও বিয়ে-মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য মসলাপাড়ায় যে উৎসবের ধুম লেগে থাকতো, করোনার কারণে সেসব আয়োজনও নেই। এছাড়া পরিবহন সমস্যার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্যের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগে যেখানে পণ্য সরবরাহ ৯০ শতাংশ ছিল, সেটা এখন প্রায় ১০ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। পাইকারি বাজার থেকে যেসব পণ্য খুচরা বাজারে যাওয়ার কথা ছিল, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা গেছে। প্রায় কাছাকাছি বাজারগুলোতেই শুধু সরবরাহ চলমান রয়েছে। আর এ কারণে পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্য জমে গেছে। অন্যান্য সময়ের মত ঈদকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই।
একদিকে চাহিদা নেই, অন্যদিকে বেচাকেনাও নেই। এরপরও চলমান পরিস্থিতিতে যদি ঈদে মসলার চাহিদা বাড়ে, তবুও দাম বাড়ার তেমন আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গত ১৩ মে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি। তারও একটা প্রভাব মসলার বাজারে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আলোচনার পর বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার মূল্যতালিকা ঘোষণা করে।
মূল্যতালিকাটা এ রকম- জিরা (ভারতীয়) প্রতিকেজি ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, দারুচিনি (চীন) প্রতিকেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, লবঙ্গ প্রতিকেজি ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা, এলাচ প্রতিকেজি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা, গোলমরিচ (কালো) ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা।
এদিকে চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের একমাত্র পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এসব পণ্যের দাম কিছুটা ভিন্ন। সেখানে জিরা (ভারতীয়) প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়। ইরান বা সিরিয়ান জিরা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। দারুচিনি (চীন) ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকা, একটু ভালো মানের দারুচিনি (ভিয়েতনাম) ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোলমরিচ ৩৭০ টাকা, লবঙ্গ ৬৮০ টাকা, তেজপাতা ৮০ টাকা, ধনিয়া ৭০ টাকা, ভালো মানের ধনিয়া প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ধরে। মিষ্টি জিরা প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাচ প্রতিকেজি ২ হাজার ৪৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও হলুদ (ভারতীয়) ৯৮ টাকা, রসুন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং আদা ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি গরম মসলার ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ ছাড়াও প্রতিবছর ওরশ, মেজবান, বিয়ে-শাদির জন্য বাজারে মসলার চাহিদা ব্যাপক থাকে। কিন্তু করোনার চলমান পরিস্থিতিতে এসব আয়োজন বন্ধ থাকায় মজুদকৃত মসলা অনেকটাই অবিক্রিত রয়ে গেছে। আবার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মসলার সরবরাহ তেমন একটা নেই। এসব কারণে মসলার বাজারে কোরবানির আমেজ নেই বললেই চলে।
ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, করোনায় বলতে গেলে মধ্যবিত্তদের পকেট খালি। তাই মানুষ কোরবানি করবে কি না সন্দেহ। যদি কোরবানি করেও সেটা নিতান্তই কম হবে। বর্তমানে মানুষ এখন হিসেব করে চলছে। আগে যেখানে পাঁচ-ছয় আইটেম তরকারি খেত, এখন কোনোভাবেই দিন পার করছে। করোনার কারণে এ বছর আর মসলার বাজারে কোরবানির কদর নাই।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, এখন বেচা-বিক্রি নাই। বাজারে সব জিনিসের দাম কম। কোন কিছুর দাম বাড়তি নেই। কোরবানির বাজারে সব মসলাপণ্যের দাম কমেছে। মসলাপাতিসহ সব পণ্যের চাহিদা প্রায় ১০ শতাংশে চলে এসেছে। পণ্যের চাহিদা কম হওয়ার কারণে দাম কমের মধ্যে রয়েছে।