এবারের প্রতিপাদ্য ‘আসুন পরিবারকে ডায়াবেটিসমুক্ত রাখি’

116

চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ কোটি মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এখানে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। একইভাবে চট্টগ্রামে ওষুধের ফার্মেসিগুলোতে চার ধরনের ওষুধবিক্রি ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ অন্যতম। এখন এমন কোনো পরিবার নেই, যে পরিবারের একজন সদস্যকে নিয়মিত ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন পড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, নীরব ঘাতক রোগ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে শৃংঙ্খলা ও সচেতনতা খুবই জরুরি।
চমেক হাসপাতালের এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের আউটডোরে প্রায় ৫ হাজার ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। একইভাবে হাসপাতালের এন্ড্রোক্রাইনোলজি ওয়ার্ডে ১৬টি বেডের বিপরীতে গতবছর সাড়ে ৮০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ বছর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীদের সংখ্যা বেশি। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন রোগী এই ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতবছরের তুলনায় এবছর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী বেড়েছে। যেখানে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, এই ওয়ার্ডে ১৬ টি বেডের বিপরীতে গতবছর সাড়ে ৮০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যা রোগীদের তুলনায় আসন সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া জনবলের চরম সংকট রয়েছে। শুধুমাত্র দুই জন সহকারী অধ্যাপক ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রাম। আর এতো সংকট থাকার পর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন ১৫ জন করে রোগী এই ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এতে চাপ আরো দিগুণ বেড়ে যায়। তাই জনবল ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি।
হাজারী গলি ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির সহ সভাপতি শফিউল আজম বলেন, প্রতিদিন ফার্মেসিতে যে পরিমাণ ওষুধ বিক্রি হয়, তার মধ্যে চার ধরনের ওষুধের বিক্রি ৮০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ অন্যতম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশসমূহে সবচেয়ে বেশি (১৮০%), এরপর আফ্রিকা মহাদেশে (১৬০%), তারপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (১৫৫%) বাড়বে। বিশ্বে এই রোগের গড় বিস্তার যেখানে ১১৪% আমাদের বাংলাদেশে সেই বিস্তারের হার ১৪৯%। যা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস : আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আসুন পরিবারকে ডায়াবেটিসমুক্ত রাখি।’ দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবার বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ (বাডাস) বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সচেতনতামূলক পোস্টার, লিফলেট বিতরণ ছাড়াও র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। আর সারাদেশের মত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৪২৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৪২ কোটিরও বেশি। তবে শঙ্কার বিষয় হলো প্রতি দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন এখনও জানতে পারছেন না যে তার ডায়াবেটিস রয়েছে। রোগ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। শনাক্ত করা না থাকলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশ্বে প্রতি বছর ডায়াবেটিসের কারণে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম স্থানে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে এ রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায়, বিশ্ব ডায়াবেটিক ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিস্কার করেন।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।