এন্ড্রয়েডের খুঁটিনাটি

468

গত পর্বে এন্ড্রয়েড ফোনের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছিলাম। আজ এর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পর্কে জানাব। একটি কম্পিউটারে যেমন প্রসেসর, মাদারবোর্ড, র‌্যাম থাকে তেমনিই একটি স্মার্টফোনেও থাকে। প্রসেসরের ক্যাপাসিটি ও ব্র্যান্ড ভিন্ন হয়। যেমন, বেশিরভাগ চীনা স্মার্টফোনে মিডিয়া টেক প্রসেসের ব্যবহার করা হয়। অন্যান্যগুলোতে কোয়ালকম বা ¯œ্যাপ ড্রাগন, এক্সিনস ও এনভিডিয়া প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। প্রসেসরের স্পিড মাপা হয় ফ্রিকোয়েন্সি (গিগাহার্জ) দিয়ে। গিগাহার্জ যত বেশি হবে প্রসেসরের স্পিডও বেশি হবে। ক্যাপাসিটি বা কার্যক্ষমতা মাপা হয় কোর দিয়ে। একেকটি কোরকে একেকটি হাতের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যেমন, আপনার যদি দুইটি হাতের জায়গায় চারটি হাত থাকত তাহলে আপনি নিশ্চয়ই আরো একটু বেশি কাজ করতে পারতেন। তেমনি মোবাইল কেনার সময় সবসময় প্রসেসরের কোর কত সেটা দেখবেন। একটি কোয়াড কোর, হেক্সা কোর বা অক্টা কোর প্রসেসর অবশই ভালো কাজ করে কারণ এগুলোতে কোরের সংখ্যা বেশি এবং তাই এরা চারগুণ, ছয়গুণ এবং আটগুণ শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারে।
প্রসেসরের ডিজাইন নির্ভর করে এআরএম আর্কিটেকচারের ওপর। এআরএম আর্কিটেকচার হচ্ছে এটির গঠনতন্ত্রের নকশা যেটির ওপর স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যারের গঠন বা ম্যানুফেকচার নির্ভর করে। স্মার্টফোনের আরো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে র‌্যাম আর রম। র‌্যাম সম্পর্কে মোটামুটি আমরা সবাই জানি। মোবাইলের বিভিন্ন এপ্লিকেশন প্রসেস করার জন্য র‌্যামের প্রয়োজন হয়। আর রম হচ্ছে মোবাইলের ইন্টারনাল মেমোরি। রমের মধ্যেই মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকে। মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে র‌্যাম ও রমের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।
এবার আসি মোবাইলের সফটওয়্যারের বিষয়ে। আগেই বলেছিলাম এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি গুগলের এবং এটি লিনাক্স কর্নেলে ডেভলাপ করা। শুরু থেকে এ পর্যন্ত গুগল প্রতিনিয়ত এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি আপডেট করে যাচ্ছে। গুগল-এর সর্বশেষ আপডেট ভার্সন এন্ড্রয়েড ১০। এন্ড্রয়েড ফোনের যারা এডভান্সড ইউজার তারা ‘রুট’ নামের একটা শব্দ শুনে থাকবেন। রুট হচ্ছে একটি বিশেষ প্রিভিলেজ বা এডমিনিস্ট্রেটর। এটি এসেছে লিনাক্স থেকে। লিনাক্স-এ এডমিনিস্ট্রেটরের বিশেষ পারমিশন এই রুট। মোবাইল রুট করা থাকলে এটির সম্পূর্ণ ফিচার ব্যবহার করা যায়। যেমন, অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো ডিভাইসের হার্ডওয়্যারকে কন্ট্রোল করে এর পারফরমেন্স বৃদ্ধি করে। এসব অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য রুট এক্সেস প্রয়োজন। আবার আপনি আপনার মোবাইল ফোনে নিজের পছন্দমতো এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চাইছেন যা আপনার মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানি দেবে না তার জন্যও রুট এক্সেস প্রয়োজন। এই ফিচারটি মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানি বন্ধ করে রাখে। এখন আপনি চিন্তা করতে পারেন আপনার মোবাইল ফোনের তো আপনিই মালিক। তাহলে আপনার রুট এক্সেস নাই কেন? আপনার রুট এক্সে নাই কারণ প্রস্তুতকারক কোম্পানি যখন ডিভাইসটি তৈরি করে তখন সেটিতে কিছু কাস্টম ফিচার যুক্ত করে থাকে। এজন্য দেখবেন স্যামসাং বা হুয়াই ফোনের এন্ড্রয়েড ভার্সন একই হলেও ডিভাইসগুলোতে কোম্পানি ভেদে কিছু অ্যাপ ভিন্ন রকম।
ডিভাইসের সিকিউরিটি ও ম্যালওয়ার প্রটেকশনের জন্যও কিছু ডিফল্ট অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। ইউজারকে যদি রুট এক্সেস দেয়া হয় তাহলে তিনি না বুঝে অ্যাপ বা ফাইল অ্য্যড-রিমুভ করে মোবাইল ফোনটির ক্ষতি করতে পারেন। তাই ইউজারকে এ পারমিশন দেয়া হয় না। থার্ড পাটি সফটওয়্যারের সাহায্যে রুট করা যায় কিন্তু এরকম করলে মোবাইল ফোনটির ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়। কেউ যদি মোবাইল ফোনটির অরিজিনাল সেটিংস ঠিক রেখে রুটের মজা নিতে চান তাহলে ভার্চুয়াল এন্ড্রয়েড সিস্টেম ভিএমওএস এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। আমরা কম্পিউটারে যেমন ভার্চুয়াল অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করি এটি অনেকটা সেরকমই।
স্মার্টফোনের আরেকটি বিষয় হলো ফ্ল্যাশ। সহজ ভাষায় ফ্ল্যাশ মানে হলো নতুন করে সফটওয়্যার দেয়া। যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তারা খুবই কমন একটা সম্যসার সম্মুখীন হন। উইন্ডোজ বুট হওয়ার সমস্যা। এটির সমাধান হিসাবে আমরা কম্পিউটারে নতুন করে উইন্ডোজ সেটআপ দেই। কাজটি অনেক সহজ তাই না? মোবাইল ফোনেও ফ্ল্যাশ করে ঠিক একই কাজটি করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় মোবাইলটি অন হচ্ছে না বা অন হওয়ার পর লোগো এসে থেমে থাকছে অথবা ফোনটি বার বার রিস্টার্ট হচ্ছে। এ ধরনের সমস্যা ফ্ল্যাশের মাধ্যমে সমাধান করা হয়। পুরানো ফাইল মুছে নতুন ফাইল দেয়া হয় কিন্তু কম্পিউটারের মতো এখানে কাজটি অত সহজ না। মোবাইল সফটওয়্যারে আগ্রহ থাকার কারণে কিছুদিন আগে মোবাইল ফোন ফ্ল্যাশের ওপর একটি অনলাইন কোর্স করেছিলাম। মোবাইল ফ্ল্যাশ কীভাবে হয় তার সম্পর্কে একটু ধারণা দেই। মোবাইল ফ্ল্যাশিং দুই ধরনের হয়। হার্ডওয়্যার বেইডড আর সফটওয়্যার বেইডড। হার্ডওয়্যার বেইডড মানে হচ্ছে একটি ডিভাইসের মাধ্যমে মোবাইলটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে তার সাথে দেয়া নিদিষ্ট সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করা। হার্ডওয়্যার ছাড়া ঐ সফটওয়্যারটি কাজ করবে না। আর সফটওয়্যার বেইডড হলো শুধু ডাটা কেবল দিয়ে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করা। এখানে মূল জিনিস হলো সফটওয়্যার। ফ্লাশিং কাজে নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়্যার লাগে। বাজারে অনেক ধরনের ফ্ল্যাশিং ডিভাইস পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে মিরাকল বক্স, সি এম টু, জেডথ্রীএক্স ও অক্টোপাস উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরো অনেক ডিভাইস পাওয়া যায়। এখানে একটা ব্যাপার হলো সব ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের জন্য কিন্তু একই ডিভাইস কাজ করে না। একেকটি মোবাইল ফোনের মডেলের জন্য একেক ধরনের ফ্ল্যাশিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এটি নির্ভর করে মোবাইল ফোনের চিপসেটের ওপর। মোবাইল ফোনের মডেল ভেদে আবার আলাদা আলাদা ফাইল কালেকশন করতে হয়। এগুলোকে স্কেটার ফাইল বলা হয়। এই স্কেটার ফাইলগুলোই মোবাইল ফোনে নতুন করে রাইট করে দিতে হয়। ফ্ল্যাশিংয়ের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। না বুঝে কাজটি করলে মোবাইল ফোন সেটটি ব্রিক মানে সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এন্ড্রয়েড-এর জন্য সর্ববৃহৎ ফোরাম হচ্ছে এক্সডিএ ডেভলপার। যঃঃঢ়ং://ভড়ৎঁস.ীফধ-ফবাবষড়ঢ়বৎং.পড়স/ এই ঠিকানায় গেলে এন্ড্রয়েড সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।