এনজিওর কিস্তির চাপ ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ)এর নির্দেশ উপেক্ষা

422

কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের ঘোষণার পর দেশের সরকারের নির্দেশনার আলোকে দেশের সকল ব্যাংক, বীমা ও এনজিওগুলো নিয়মিত কিস্তি আদায় বা ব্যাংব ঋণ পরিশোধে কোনরকম চাপ দেয়া যাবেনা মর্মে নির্দেশ জারি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। একইসাথে ঋণ পরিশোধে অনিয়মিতকরণের কারণে কাউকে খেলাপী হিসাবে ঘোষণা এবং এর জন্য কোনরকম বাড়তি ফি বা জরিমানা আদায় করা যাবেনা মর্মে সঙশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ নির্দেশ যথাযথ অনুসরণ করলেও বেসরকারি সেবা বা ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো (এনজিও) তা অনুসরণ না করে হতদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের ঋণগ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিমোধে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আসছে। গতকাল শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মহামারি করোনা ভাইরাস আতঙ্ক এবং জোনভিত্তিক লকডাউনের কারণে এখন ঘরবন্দী চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার সাধারণ মানুষ। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া লোকজন কাজে যেতে পারছেন না। আয় রোজগার বন্ধে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। হা করে তাকিয়ে আছেন ত্রাণের দিকে। ত্রাণ পেলেই খাবার জুটে আর না পেলে নাই। এরই মাঝে তাদের তাড়া করে চলেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি। ক্ষুদ্রঋণের কথা মাথায় নিয়ে দিশেহারা। ভোরবেলায় এনজিও’র কর্মকর্তারা বেরিয়ে পড়ছেন কিস্তি আদায় করার জন্য। প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে কড়া নাড়ছেন কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে আর রক্ষা নেই। যেভাবেই হোক কিস্তির টাকা তাদের চাই। মহানগরী ও উপজেলার অনেক এনজিও থেকে খেটে খাওয়া মানুষ দৈনিক বা সপ্তাহিক পরিশোধযোগ্য চুক্তিতে ঋণ নিয়ে থাকেন। তারা প্রতিদিন বা সপ্তাহে পারিশ্রমিক থেকে তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির কথা মাথায় রেখে অনেকেই রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে তাদের যেখানে দিনের খাবার জুটছেনা সেখানে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করা দুরুহ ব্যাপরার। এ বিষয়ে ব্রাকসহ বেশ কয়েকটি এনজিওর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিমত, আমাদের কিছুই করার নেই। মালিক পক্ষ আমাদের আদেশ করেন, আমরা সেই মোতাবেক কাজ করি। তবে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে কিছু দিন ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখা উচিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ ঠিকমতো কাজে বের হতে পারলে আর কোন সমস্যা হবে না। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, কোন এনজিও সংস্থা যদি কিস্তির জন্য চাপ দিয়ে থাকে বা হয়রানি করে, তবে অভিযোগ দিন। আমরা ওই এনজিও’র বি??দ্ধে ব্যবস্থা নিবো। উল্লেখ্য যে, গত মার্চ মাসে ঘোষণা করেছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন না, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাঁদের খেলাপি গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ) থেকে সনদপ্রাপ্ত দেশের সব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ প্রযোজ্য। এ নিয়ে এমআরএ থেকে এক প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে উক্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির এ নেতিবাচক প্রভাবের ফলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমআরএ বিধিমালা, ২০১০এর বিধি ৪৪ অনুসরণ করে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণ তার চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫৮টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এমআরএ থেকে সনদ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গ্রাহকেরা ঋণ নিয়েছেন প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জি বলেছিলেন, ঋণের কিস্তি কেউ পরিশোধ করতে পারলে করবেন। তবে কেউ করতে না পারলে তাঁকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করা যাবে না অন্তত ৩০ জুন পর্যন্ত। আমরা আশা করি, এনজিওগুলো তাদের এমআরএর-এর নির্দেশনা মেনে করোনাকালে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধে আর কোন চাপ দিবেনা। দিলে জেলা প্রশাসন উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন-প্রত্যাশা।