এনআরসি : সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা ‘অসন্তুষ্ট’ বিজেপির

45

আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে অসন্তুষ্ট ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আবারও দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছে। আর আগে দুইবার তালিকার তথ্য পুনরায় যাচাই করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল বিজেপি ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। তবে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছিলেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য স্টেটসম্যান জানিয়েছে, বিজেপি মনে করছে, তিন কোটি ১০ লাখ মানুষকে অন্তর্ভূক্ত ও ১৯ লাখ মানুষ বাদ দিয়ে প্রকাশিত ওই তালিকায় ভুলের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক তালিকায় প্রায় ১৯ লাখ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার।
তবে এ তালিকায় অনেক হিন্দু বাদ পরায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপির অনেক নেতা। আসামের নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, এটি জনগণকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে আপিল করতে সহায়তা করবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উদ্ধৃত করে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এ দেশের জেলাগুলোতে তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের ২০ শতাংশ ও আসামের মূল ভূখÐের ১০ শতাংশ নমুনা পুনরায় যাছাই করতে উচ্চ আদালতে যাবে তাদের দল।
আসামের নাগরিক তালিকা বিজেপিকে বিস্মিত করেছে। অনুমান করা হয়েছিল, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি; তাদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। শর্মার দাবি, তালিকাটি ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’সহ তথ্য তৈরির প্রক্রিয়াতে ‘ভুল’ রয়েছে। ওই কারণে ১৯৭১ সালের আগে আসামে আসা হিন্দু শরণার্থীরা বাদ পড়তে পারে। বিজেপির এই নেতা বলেন, ‘খসড়ার ঠিক পরেই এনআরসি নিয়ে আমরা আশা হারিয়েছি। যখন তালিকা থেকে অনেক প্রকৃত ভারতীয় বাদ পড়েন, তখন কীভাবে দাবি করা যায় যে, এই ডকুমেন্ট আসামের সমাজের জন্য বিশেষ কিছু বা গুরুত্বপূর্ণ?’
আসামের বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস চূড়ান্ত নাগরিকা তালিকা প্রকাশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে বিজেপি ও এনআরসি প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলার মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে আসছে। পর্যাপ্ত নথি না সরবরাহ করায় শনিবার প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় ১৯৭১ সালের আগে আসা অনেক হিন্দু বাদ পড়েছেন। আসামের নাগরিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। তখন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এটা হালনাগাদের নির্দেশ দেন। সেই সময় থেকে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈই ও বিচারপতি আর ফালি নরিমান এ বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের কঠোর পর্যবেক্ষণে আসাম রাজ্যের নাগরিক নিবন্ধনের পুরো প্রকল্পটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতীক হাজেলা। তালিকা থেকে নাগরিকদের বাদ পড়া ইস্যুতে যারা বিতর্ক করতে চান, তাদেরকে একটি ১২০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।