এতো স্বর্ণ যাচ্ছে কোথায়?

65

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আসে স্বর্ণ। এরপর তা পাচার হয় অজানার উদ্দেশে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এসব স্বর্ণের গন্তব্য কোথায়? তবে অনেকের মতে, ভারতেই পাচার হচ্ছে স্বর্ণ। স্থল ও বিমান পথে পাচার হয় তা। স্থল সীমান্ত দিয়েই বেশিরভাগ স্বর্ণ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত রবিবার দু’টি পৃথক অভিযানে প্রায় দু’মণ ওজনের স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মূল্য ৩০ কোটি টাকারও বেশি। উদ্ধারের চাইতে পাচারকৃত স্বর্ণের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি বলে অনেকের ধারণা।
জানা যায়, রবিবার দু’টি অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ৭০০ পিস স্বর্ণের বার। যার ওজন ৭২ কেজি। মূল্য ৩০ কোটি টাকারও বেশি। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার জনকে। নগরের সিআরবিতে একটি প্রাইভেটকার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জে একটি জিপে তল্লাশি করে মোট ৭০০ স্বর্ণের বারসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, জোরারগঞ্জ থানার সোনারপাহাড় এলাকায় ৬০০ পিস স্বর্ণের বারসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা থানার আজমপুর এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে রাকিব (৩৪) ও একই জেলার মোবারকপাড়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে করিম খান কালু (৩৪)।
জেলার জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান জানান, রবিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাই উপজেলার উত্তর সোনাপাহাড় এলাকার ওই জিপে তল্লাশি করা হয়। এ সময় জিপের পেছনের সিটের নিচে তেলের ট্যাংকের ওপর বিশেষ বক্সে স্বর্ণের বারগুলো পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, জিপ থেকে রাকিব ও করিম নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়ছ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে স্বর্ণের বারগুলো নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সোনাপাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬০০ পিস স্বর্ণের বারসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে স্বর্ণগুলো নিয়ে তারা ঢাকায় যাচ্ছিলেন। এর বাজারমূল্য প্রায় ২৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
অপরদিকে একই দিন সকাল ১১টার দিকে সিআরবি এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি করে সাড়ে ৪ কোটি টাকা স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। উদ্ধারকৃত ওই স্বর্ণের ওজন প্রায় ১২ কেজি। একই সঙ্গে গাড়িচালক বিলাল হোসেন (২৮) এবং স্বর্ণের বাহক লাভু সাহাকে (৫৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, লাভু সাহার কোমরে বাঁধা বেল্টে স্বর্ণের বারগুলো ছিল। তারা জানিয়েছে, বদনা শাহর মাজার এলাকায় এক ব্যক্তি তাদের স্বর্ণের বারগুলো দিয়ে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে দেবার কথা বলেছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, স্বর্ণ পাচারের মূল রুট চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে আসার পর ঢাকাসহ সারা দেশে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার হয় স্বর্ণ। এজন্য রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহ আমানত বিমান বন্দর স্বর্ণ চোরাচালানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দুবাই, আবুধাবী, মালয়েশিয়া থেকে স্বর্ণ আসার পর পাচার করা হয়।
সোনা চোরাচালানের জন্য চট্টগ্রাম ও মধ্যপ্রাচ্যে সিন্ডিকেট রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সিন্ডিকেট নির্দিষ্ট ফ্লাইটে করে বাহক মারফত স্বর্ণ শাহ আমানতে পাঠায়। এরপর চট্টগ্রামে অবস্থানরত এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার ই আলম বলেন, চোরাচালান নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে। কেউ যাতে অবৈধভাবে স্বর্ণ বা অন্য কোনো অবৈধ মালামাল আনতে না পারে সে ব্যাপারে সকলের প্রতি নির্দেশ দেওয়া আছে। কোনো চক্র মাঝে মধ্যে আনলেও তা ধরা পড়ে যায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি চালান ধরাও পড়েছে। এখানে দায়িত্বরত প্রতিটি সংস্থাই তৎপর।
সূত্র জানায়, রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, হাজারী লেন ভিত্তিক সিন্ডিকেট স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। স্বর্ণ চট্টগ্রামে আসার পর সেগুলো হাজারী গলি বা রিয়াজউদ্দিন বাজারে গুদামজাত করা হয়। সেখানে রয়েছে ছোট ছোট গুদাম। কয়েকদিন রাখার পর সুযোগ বুঝে বাহক মারফত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে বেশিরভাগ স্বর্ণ পাঠানো হয় ভারতে।
আকাশ পথে বা স্থলপথে পাচার করা হয় কলকাতায়। বেনাপোল, আখাউড়া, তামাবিলসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার করা হয়। গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচারকালে ভারতীয় সীমান্তে ২০ কেজির বেশি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, আটক স্বর্ণ তারা নারায়ণগঞ্জ নিচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। তারপর কোথায় যাবে তা বলতে পারেনি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এ চক্রে কারা রয়েছে, কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- এসব জানার চেষ্টা করা হবে।
সূত্র জানায়, ভারতে বর্তমানে স্বর্ণের দাম বেশি। চোরাচালানে আসে বিধায় বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কম পড়ে। ভারতে বিক্রি করলে দাম অনেক বেশি পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, স্বর্ণের গন্তব্য কোথায় তা বের করা হবে। কারা জড়িত তাও বের হবে। বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে।