এগিয়ে যাওয়া নারীদের গল্প

47

বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজ বরাবরই বেশ চ্যালেঞ্জিং। কমিউনিকেশনের মাধ্যমে ব্র্যান্ড কিংবা সার্ভিস কনজিউমারদের কাছে সহজে, সঠিকভাবে প্রচারে দিন-রাত ভুলে কাজ করাটাই যেন এখানে নিয়ম। এই চ্যালেঞ্জটা আরো বেড়ে যায় যখন কাজ করতে হয় এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেড এর মতো কোন প্রতিষ্ঠানে।
এখানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে এশিয়াটিকের নাম উঠে এসেছে বিশেষ একটি কারণে। অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োজিত কর্মীদের মাঝে পুরুষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে এশিয়াটিকের চিত্রটি একদমই ভিন্ন। পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি এখানে প্রায় ৪০ ভাগ নারী কাজ করেন।
সারা যাকের, ভাইস চেয়ারপারসন, এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপ অব কোম্পানিস
বাংলাদেশের অনন্য নারীদের মাঝে তিনি অন্যতম। টিভি নাটক, মঞ্চ নাটক, চলচ্চিত্র- সব ভুবনেই রেখে চলেছেন দৃঢ় পদচ্ছাপ। কর্মক্ষেত্রেও তিনি অতুলনীয়া। পথচলার শুরু থেকেই অভিভাবকের মতো নিযুক্ত আছেন প্রতিষ্ঠানটির সাথে। যেমনভাবে স্বীকৃত হয়েছেন নিজের ভুবনে, তেমনভাবেই বিশ্ব পরিসরে স্বীকৃতি পেয়েছেন কর্মদক্ষতার গুণে। এত দায়িত্বের মাঝেও ছাড় দেননি নিজের পরিবার নিয়ে। সন্তানদের গড়ে তুলেছেন সুশিক্ষিত, সুনাগরিক এবং সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে। পুরো এশিয়াটিকজুড়ে রয়েছে তাঁর তুমুল জনপ্রিয়তা। মিষ্টি হাসি, আন্তরিকতা আর নিষ্ঠার সমন্বয়ে তিনি একজন উদাহরণ সৃষ্টিকারী নারী।
শারমিন রহমান, এসোশিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্রিয়েটিভ
তিনি যে অবস্থানে কর্মরত আছেন তা ভীষণ অনুপ্রেরণার। মেধা, সৃজনশীলতা আর পরিশ্রমের নিপুণ মেলবন্ধনে তিনি প্রতিনিয়ত সামলে চলেছেন কর্ম জীবন। নিত্যনতুন আইডিয়া আর সমাধানে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন তার টিমকে একের পর এক মাইলফলক ছোঁয়ার অসাধারণ যাত্রায়। তার তত্ত্বাবধানে ক্রিয়েটিভ টিমের আর্ট সেকশনে কাজ করছেন ডেইজি দেওয়ান, ফারজানা তামান্না, তাসমিত আফিয়াত আর্নি, ফারজানা আক্তার পুষ্পের মতো একদল উদ্দীপ্ত নারী। শারমিন সুযোগ পেলেই নেমে পড়েন বিশ্ব ভ্রমণে। নতুনকে জানার, নতুন কিছু সৃষ্টি করার আকাঙ্খা তাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায়। এতকিছুর পরও পিছিয়ে নন ব্যক্তিগত ইচ্ছে পূরণে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আঙিনায় তার ডিজাইন করা পোশাক প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। এশিয়াটিক একটি পরিবারে মতো। এই পরিবারে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন কাশফিয়া নাহরিন। যিনি পরিবারের সদস্য, সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ডিপার্টমেন্ট ক্লায়েন্ট সার্ভিস আর ক্রিয়েটিভ টিমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার মতো কাজটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে থাকেন।
সৈয়দা মেহের নূর, অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ক্লায়েন্ট সার্ভিস ডিরেক্টর
চ্যালেঞ্জ নেয়াটা মেহের এর চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দক্ষতার সাথে অনেক বছর সামলেছেন দেশের নামকরা সব ব্র্যান্ড। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছে থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন ক্যারিয়ার বিষয়ক উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে। ফিরে এসেই সম্পৃক্ত হয়েছেন আরো বড় দায়িত্বে। স্বামী, দুই শিশুকন্যা নিয়ে তার সুখের সংসার। আদর্শ বসের মতো করেই আদর্শ মায়ের দায়িত্বটা পালন করে আসছেন দারুণভাবে। নারীদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিক নির্দেশনা দিতে তিনি সবসময় হাসিমুখে প্রস্তুত। তাই তার অধীনে কাজ করা নারী কর্মীদের সংখ্যাটাও বেশ প্রশংসনীয়। ফারাহ দিবা, ফৌজিয়া করিম, ইয়াশনা ইসলাম, লামিয়া আলমগীর, জান্নাত বুশরা অন্তরা তার টিমের পার্ফেক্ট টিমমেট হয়ে কাজ করছেন, এগিয়ে চলেছেন অর্জনে।
তাহরিমা রহমান পুশকিন, সিনিয়র ডিরেক্টর, সোশ্যাল কমিউনিকেশন
কাজ ভালোবাসেন, গভীর আন্তরিকতায় কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোও দিন শেষে সহজে পরিণত করেন। তার এই এগিয়ে যাওয়ার যাত্রায় কোনকিছু কখনও বাধ তুলতে পারেনি। বিশ্বাস করেন নারীর ক্ষমতায়নে। কর্ম এবং ব্যক্তি জীবনে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন অসংখ্য নারীদের। তার টিমে আরো একটি দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান এসোসিয়েট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন মিথিলা হোর। দুুজনেই শুধু কর্ম জীবন নয়, পারিবারিক জীবনকেও আগলে রেখেছেন পরম মমতায়।
ফারাহ্ তানজীন সুবর্ণা, এসোসিয়েট ডিরেক্টর, গ্রুপ এইচআর
রিসোর্সিং এবং রিক্রুটিং প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয় একাগ্রতায়। যাচাই করতে হয় অগণিত অ্যাপ্লিকেশন, বাছাই করতে হয় যোগ্য ক্যান্ডিডেট। এখানেই শেষ নয়। নিয়োগকৃত কর্মীর সুযোগ সুবিধাসহ সকল বিষয়াদি গুরুত্বের সাথে আপ-টু-ডেট রাখতে হয়। এশিয়াটিকের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে প্রক্রিয়াটি আরো চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ সুবর্ণা প্রতিনিয়ত সামলে চলেছেন নারীদের নিয়ে গঠিত টিম নিয়ে। এ টিমে তার সাথে সম্পৃক্ত আছেন লুবনা তনিমা এবং আঞ্জুমানারা সুমি। ব্যস্ততার ভীড়ে হিউম্যান রিসোর্স টিম এশিয়াটিক পরিবারের খোঁজ রেখে চলেছে, সময়-অসময়ে পাশে থাকছে যেকোনো প্রয়োজনে। কর্ম জীবনের পাশাপাশি রন্ধন শিল্পী হিসেবেও সুবর্ণার বেশ সুনাম রয়েছে।
তানজিলা বাহার চৌধুরী, তৃষা গ্রুপ ম্যানেজার, স্ট্রেটিজিক প্ল্যানিং
সময় কিংবা বয়স নয়, বিশ্বাস রাখেন পারদর্শীতায়, আত্মবিশ্বাস। যেখানে সবাই চায় তার কমফোর্ট জোনে বিচরণ করতে, সেখানে তিনি বেশ অল্প বয়সেই অবতীর্ণ হয়েছেন চ্যালেঞ্জিং সব ভূমিকায়। নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপে। শিখেছেন, শিখিয়েছেন এবং প্রতিবারই আলোকিত হয়েছেন নিজের আলোয়। কর্মজীবনে জয়ী তানজিলা একইসাথে ব্যস্ত আছেন আন্তর্জাতিক গবেষণাভিত্তিক কাজে। শখের বসে লেখালেখি, আঁকিবুঁকিও চলছে অবিরাম। স্ট্রেটিজিক প্ল্যানিং টিমে আরো কাজ করছেন গ্রেস কান্তা সরকার, রেবেকা আলী। ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটিজির দাঁড় করাতে শহর নেই, গ্রাম নেই যেকোনো প্রান্তেই তারা ছুটে যান ফিল্ড ভিজিটে, করেন দীর্ঘ রিসার্চ, কেস স্টাডি, কনজিউমার এনালাইসিসের মতো শ্রমসাধ্য, বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।
নারীরা বাইরে নিরাপদ নন, নারীরা কাজে বাড়তি সুবিধা পান, নারীরা বড় দায়িত্বে পিছপা- এই সকল ধারণাকে ভ্রান্ত করে দিয়ে এশিয়াটিকের অদম্য নারীরা নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন স্ব-স্ব আকাশে। ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবন সব জীবন যুদ্ধেই ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার। সমাজে মিডিয়াকেন্দ্রিক সমালোচনার বিপক্ষে নিজ গুণে, নিজ শক্তিতে তারা প্রমাণ করছেন নিজেদের। তাদের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপন শিল্প, অনুপ্রাণিত হচ্ছে নারীরা, এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ, সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ।