এখনও আমার কমিশনেই অনেক দুর্নীতিবাজ আছে

22

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। এটা সম্ভবও না। তবে সবাই আন্তরিক হলে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা সবাই জানি দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি যত এগিয়ে যাবে, দুর্নীতিও তত পিছু নেবে। কারণ, দুর্নীতি হচ্ছে উন্নয়নের ভাই-বোন। এটা হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংজ্ঞা।
গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, অনেক মামলা হয়েছে। অনেক আটক হয়েছে। অনেককে ডাকা হয়েছে। আমরা কাজ করে দেখিয়েছি। সমাজে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা এমনটা চাই না। আমরা মামলা করতে চাই না। কারণ, মামলার যে কি পরিণতি তা আমরা জানি।
তিনি আরও বলেন, একটি জেলার ডিসি-এসপি যদি ভালো হন তাহলে সেখানে দুর্নীতি কমে আসবে। সারাদেশে আমাদের এতো অফিসের দরকার নেই। আমি চাই, অফিস যত কমবে তত ভালো।
এ প্রসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এখনো আমার কমিশনে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। আর অফিস বাড়ালে অভিযোগ আরও বাড়তে পারে। তবে এখনো ১৬টি অফিস নতুন করে করার প্রস্তাব রয়েছে। ভেবে-চিন্তে সেগুলো করা হবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, দুদকের হাত অনেক লম্বা। এ ক্ষেত্রে আইনও অনেক কঠোর। তাই মামলা না হলেই যে আটক করা যাবে না এমন কথা দুদকের আইনে নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন আপনার মায়ের গলা থেকে চেইন ছিনতাই হচ্ছে, চুরি হচ্ছে তখন কি আপনি চোরকে ছেড়ে দেবেন?
তিনি বলেন, পুলিশকে দেখলে আমরা ভয় পাই। এটি কাটানোর জন্য পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে। পুলিশ অনেক সময় আসামি ধরতে মানুষের বাড়ি যায়। কিন্তু আমরা কী ওই পুলিশ হতে পারি না- যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের খোঁজ খবর নেবো। তার মেয়েটা ভালো আছে কী না। কেউ তাকে টিজ করে কি না?
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কতোটা টেকসই হয়েছে তা কী বলতে পারি। যতোটা উন্নয়ন হয়েছে সেটা ধরে রাখাই বড় উন্নয়ন। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, শতভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এসেছে। এটা বড় ধরনের উন্নয়ন। যা বিশ্বের রোল মডেল। কিন্তু কতোজন শিক্ষার্থী ড্রপআউট হলো, ক্লাসে ঠিক মতো পড়ানো হয় কি না তা মনিটরিং না হলে এ উন্নয়ন অর্থহীন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুনীতি জেলায় জেলায় হয়, কিন্তু চাঁদপুর জেলায় দুনীতি বেশ কম। আমি চাই, আগামী মুজিববর্ষের আগেই যেন চাঁদপুর জেলাকে দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করতে পারি। এটি আমার জন্য গর্বের। কারণ, চাঁদপুর আমার জন্মভূমি। এ জন্য সারাদেশেই জেলাভিত্তিক একটি দুর্নীতি প্রতিরোধ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
সভায় দুদকের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমানসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।