এক্সপ্রেসওয়ে কী কারণে সুবিধা কী

108

প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বমানসমৃদ্ধ মহাসড়কের নাম এক্সপ্রেসওয়ে। দেশের সব মহাসড়কে বিরতিহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ, এসব মহাসড়কে আছে প্রতিবন্ধকতা ও একের পর এক মোড়। মহাসড়কের পাশে আছে হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। এসব কারণে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারে না। ফলে গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি থাকে অনিশ্চিত। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতেই দেশের কয়েকটি মহাসড়কে করা হবে এক্সপ্রেসওয়ে। এর প্রথমটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে।জানা গেছে, এতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না, দ্রæতগতির যানবাহন চলবে। এসব যানবাহন কোথাও থামবে না। থামলেও ব্যবহার করতে হবে একটি নির্দিষ্ট লেন, যা মূল এক্সপ্রেসওয়ের বাইরে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলবে একটি নির্দিষ্ট গতিতে। এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে যানবাহন কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল। আর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছে যাবে অন্য যানবাহনের তুলনায় কম সময়ে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এসব লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশেও যাত্রা শুরু করেছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েটি। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান চলাচলের জন্য এটি খুলে দিয়েছেন। এক্সপ্রেসওয়েটি যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার ও পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ৪২ মিনিট এবং ঢাকা থেকে মাওয়া ২৭ মিনিট। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নকশাও করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। এই এক্সপ্রেসওয়েটি এশীয় মহাসড়কের অংশ। এত গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হয়েছে আটটি পথ। ঢাকার বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ, আবদুল্লাপুর, আবদুল্লাপুর সংলগ্ন টোলপ্লাজা, শ্রীনগর ফ্লাইওভার ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মোড়ে রয়েছে এসব প্রবেশ-নির্গমন পথ। আর এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে কিছুদূর পর পর নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী ছাউনি-সংবলিত বাস-বে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি চার লেনের। সঙ্গে সড়কের দুই পাশে থাকছে সাড়ে ৫ মিটার করে (একেক পাশে দুই লেন করে) দুটি সার্ভিস লেন। এগুলো দিয়ে স্থানীয় পরিবহন চলাচল করবে।
জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে রয়েছে ৪৪টি কালভার্ট, ১৯টি আন্ডারপাস, চারটি বড় সেতু, ২৫টি ছোট সেতু, পাঁচটি ফ্লাইওভার, দুটি ইন্টারচেইন, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস। আগামী ২০ বছরের ক্রমবর্ধমান যান চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়েটি ইউরোপের অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ককেও হার মানাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি ফ্লাইওভার করা হয়েছে আবদুল্লাপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার ও মালিগ্রামে। এক্সপ্রেসওয়ের জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে রয়েছে চারটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ এবং চারটি বড় সেতু। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে খুলনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সওজ অধিদফতরকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের মে থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যাবে। ইউরোপের অনেক সড়ককে হার মানাবে। এটি বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চার লেন নয়, দুদিকের সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবহন শ্রমিক নেতা হানিফ খোকন জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়েটি নিঃসন্দেহে দেশের একটি বড় সম্পদ। এটি ব্যবহার করে যানবাহনগুলো যানজট এড়িয়ে নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারবে। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ খোকন জানিয়েছেন, এ ধরনের মহাসড়কে চলাচল উপযোগী যানবাহন সংকট রয়েছে। সংকট রয়েছে এ ধরনের মহাসড়কে চলাচলের মনমানসিকতাসম্পন্ন চালকেরও। এত চকচকে রাস্তায় গরিবি চেহারার যানবাহন চলতে দেখে জানতে ইচ্ছে হয়, এগুলোর পরিবর্তন কবে হবে।
তবে আশাবাদ ব্যক্ত করে হানিফ খোকন বলেন, কিছুদিন এমন হলেও পরবর্তী সময়ে এসব কেটে যাবে। আমরা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মানানসই হয়ে চলতে পারবো।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করলে গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক আলাউদ্দিন মিয়া জানিয়েছেন, মহাসড়কটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ। উন্নত মহাসড়কে উন্নত পরিবহন প্রয়োজন। একই সঙ্গে এসব বিশ্বমানের মহাসড়কে গাড়ি চালানোর উপযুক্ত চালক ও স্টাফ দরকার। হয়তো একসময়ে এর পরিবর্তন হবে। সমস্যাও কেটে যাবে। শুধু সরকার নয়, আমাদেরও দায়িত্ব এই সম্পদ রক্ষা করা।