একাত্তরের নায়ক- এ বি এম নিজামুল হক

81

সুশীল বড়ুয়া

উনিশ শতকের বঙ্গীয় রেনেসার সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো জাতীয়তাবাদের চেতনা উন্মেষ, ব্যক্তি স্বাধীনতার সঙ্গে সাম্যের আদর্শের বীজ বাঙালির মননে রোপণ করা। পূর্ব বঙ্গের জন্য রেনেসাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকেই শিক্ষিত মুসলমানের মনে আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন দেখা দিতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র মিলে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ/পরিষদ’। এই সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন অধ্যাপক আবুল হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহের হোসেন, আবুল ফজল ও আবদুল কাদির। তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠলো ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন। তাদের মুখপত্র ছিল ‘শিখা’। তারা তাদের মুখ পত্রের মাধ্যমে ঘোষণা করল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। শুরু হলো বাংলার মুসলিম সমাজের বৌদ্ধিক জাগরণ।
হাজার বছর আগে থেকে অবিভক্ত ভারতে যারা শাসন করতো তাদের প্রথম কাজ এদেশের নিরীহ জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিজাতীয় ভাষা। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর পাঞ্জাবী শাসক গোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। উর্দু পূর্ব বঙ্গের ভূমি সন্তানদের কোন স্বীকৃত ভাষা না। অথচ পূর্ব বঙ্গের জনগণ হলো পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ষাট ভাগ। মেজরটির ভাষাকে প্রাধান্য না দিয়ে বিজাতীয় এক ভাষাকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করে। অথচ উর্দু পাকিস্থানের কোন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষা নয়। উর্দু ছিলো উপর তলার কিছু সংখ্যক উদ্বাস্তদের ভাষা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করে ১৯৪৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন দশক পর পূর্ব বঙ্গের মুসলিমরা তাদের আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি ভাষার আন্দোলন চ‚ড়ান্ত রূপ ধারন করে এবং পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ছাত্রদের মিছিলে গুলি বর্ষণ করলে অনেক ছাত্র জনতা শহীদ হন। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন প্রথম বাঙালি জাতি সত্তার বীজ বপন বলে অনেক বুদ্ধিজীবী সহ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আবির্ভূত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুটিকয়েক মেধাবী ছাত্র ১৯৬২ সালে গঠন করে ‘নিউক্লিয়াস’ বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন তিন জন। যাদের বয়স ছিলো ১৯ বছর থেকে ২১ বছর। এর প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান এবং অন্য দুই জন হলেন আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমদ। তারা তিন জনই ছিলেন ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা। নিউক্লিয়াস গঠিত হওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে ছাত্রলীগকে বাঙালি জাতিয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে একটি প্রগতিশীল সংগঠনে রুপান্তরিত করবে। যার চুড়ান্ত লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক ভিত মজবুদ করে সারা দেশে নিউক্লিয়াসের শাখা গঠিত হতে থাকে। নিউক্লিয়াসের সাথে চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন নেতা এম.এ আজিজের শর্তহীন সমর্থন নিউক্লিয়াসের কাজের গতিশীলতা বিপুল ভাবে বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে চট্টগামের নিউক্লিয়াসের দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি ছাত্রলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমদ, এম এ আজিজ ও আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে আলাদা ফোরাম গঠন করেন। চট্টগ্রাম জেলা নিউক্লিয়াসের আর যারা ছিলো তারা হলেন এম.এ সালেহ মোক্তার আহমদ, সাবের আহমদ আজগরী, এবি এম. নিজামুল হক সহ প্রমুখ। এবিএম নিজামুল হক নিউক্লিয়াসের সাথে যখন জড়িত হন তখন তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র এবং চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক (১৯৬৬-৬৭) এবং চট্টগ্রাম কলেজের সাধারণ সম্পাদক।
এম এ আজিজ, এম এ হান্নান এবং চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সালেহ যখন দেখলেন এবিএম নিজামুল হক ১৯৬২ সাল থেকে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র থাকাকালিন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত তাই তাকে সাংগঠনিক কাজে লাগাতে হবে। স্কুল ছাত্রবস্থায় থেকে নিজামুল হকের নেতৃত্বগুণ ছিল প্রকট। ১৯৬২-৬৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যায়ন কালে মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন তিনি। এই সংগঠন সেই সময় চট্টগ্রাম শহরের সম মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রদের সংগঠন হিসেবে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তিনি ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের (টেকনাফ-সন্দিপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন। তিনি এবং ১৯৭০-৭১ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এ বি এম নিজামুল হক।
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের মনোয়ন নিয়ে জি.এস পদে এবি.এম নিজামুল হক প্রার্থী হয়। ছাত্রলীগের প্যানেলকে প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্র ইউনিয়ন, এনএসএফ ও ছাত্র শক্তি যৌথ প্যানেল ঘোষণা করেন। সেই বৎসর কলেজের শতবর্ষ উদযাপিত হবে। কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে বানচাল করার মানসে প্যানেল প্রার্থির ফর্ম ভুলভাবে পূরণ করে যাতে ছাত্রলীগ জিততে না পারে। যে কারনে সে বছর কলেজের সংসদ নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। উনসত্তরের গণআন্দোলনে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দেন এবিএম নিজামুল হক। তিনি ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নের্তৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেন। উনসত্তর সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস জোহা পাকিস্তানি সৈন্যের গুলিতে নিহত হবার ফলে সারা বাংলাদেশের ছাত্র জনতা তীব্র আন্দোলনে গর্জে উঠে ডঃ জোহা হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম কলেজে প্রতিবাদ সভায় কলেজের অধ্যক্ষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মোজাফ্ফর আহমদকে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফেরত দিতে আহবান জানান এবিএম নিজামুল হক। তার আহবানে সাড়া দিয়ে অধ্যক্ষ মহোদয় সেখানেই পুরস্কার ফেরতের ঘোষণা দেন। উনসত্তরের গণঅভুত্থানে তার ভ‚মিকা ছিলো গেীরবোজ্জল।
ষাটের দশকে চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের রাজনীতি এম.এ আজিজ এবং জহুর আহমদ চৌধুরী গ্রæপে বিভক্ত ছিল। এই দুই নেতাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের রাজনীতি ও বিভক্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু সেই সময় আওয়ামীলীগের রাজনীতি ছিলো ছাত্রলীগ নির্ভর সেহেতু আওয়ামীলীগের নেতারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন আঞ্চলিক শাখা কলেজকে নিজেদের বলয়ে রাখার চেষ্টা করতেন। তেমনি ভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজ স্কুল এই দুই নেতাকে নিয়ে ভাগ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম কলেজ, ইন্টার মিডিয়েট কলেজ, মেডিকেল কলেজ, কর্মাস কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ শাখা এম এ আজিজ গ্রæপ ছাত্রলীগের অধিনে চলে আসে। অন্যদিকে সিটি কলেজ, এম.ই.এস কলেজ ইসলামিয়া কলেজ জহুর আহমদ চৌধুরী গ্রæপ ছাত্রলীগের অধিনে চলে যায়। ছাত্রলীগের এই বিভক্তিতে একটা বিষয় লক্ষ করা যায় ছাত্রলীগ এম এ আজিজ গ্রæপ সব সরকারি কলেজ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এই সব কলেজে সব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা অধ্যায়ন করে।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ ছিলো ‘নিউক্লিয়াস’ গ্রæপের দখলে। যে কারনে চট্টগ্রামের আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিনত হয় চট্টগ্রাম কলেজ। অন্য দিকে কলেজের অবস্থান ছিলো আন্দোলন কামী ছাত্রদের অনুকুলে। সহজে আইন শৃংখলা বাহিনী কলেজে হামলা চালিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করতে পারতো না। পুলিশ আসার সাথে সাথে ছাত্ররা চারিদিক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারতো। কলেজে আরো সুবিধা ছিলো দুই তিন টা ছাত্র হোস্টেল। সে কারনে ৬৬ সালের ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭০ সালের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং মুুক্তি যুদ্ধে ছিলো চট্টগ্রাম কলেজের গৌরবদিপ্ত ভূমিকা।
বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণা করার পর আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক ভাবে ৬ দফার পক্ষে অবস্থান নেননি প্রথমে। ৬ দফার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ আজিজ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াস গ্রæপ। এম.এ আজিজ সর্বপ্রথম ৬ দফার পক্ষে লালদীঘির ময়দানে জনসভার আয়োজন করে। যেহেতু সে সময় আওয়ামী লীগের সারাদেশ ব্যাপী সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল ছিল এবং চট্টগ্রামে ও একই অবস্থা সেহেতু চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ লাল দিঘীর জন সভাকে সফল করার জন্য গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবি.এম নিজামুল হক চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিশাল ছাত্র জনতার মিছিলের নের্তৃত্ব দিয়ে লাল দিঘীর মাঠের জনসভায় হাজির হয়। পরবর্তীতে ৬ দফাকে জনগণের মাঝে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য টেকনাফ থেকে সন্দিপ রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে এবিএম নিজামুল হক সহ অন্যান্য ছাত্র নেতারা ৬ দফার সমর্থনে ব্যাপক ছাত্র জনসভার আয়োজন করে এবং বৃহত্তম চট্টগ্রাম জেলায় ৬ দফাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়। তিনি ছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা। ১১ দফার সমর্থনে আন্দোলনের সময় তিনি স্বৈরচারী আয়ুব সরকার তাকে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের পর জেল থেকে ছাড়া পায়। সত্তর সালের নির্বাচনের সময় এবিএম নিজামুল হকের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৬৭ সালে নিউক্লিয়াসের কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম প্রধান আবুল কালাম আজাদের (এড.) কাছে নির্দেশ আসে নোয়াখালীতে নিউক্লিয়াসের প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। এবং কেন্দ্র দুজনের নাম উল্লেখ করে বলে যে কেউ এক জনকে দায়িত্ব দিতে হবে। আবুল কালাম আজাদের সাথে নোয়াখালীর উল্লেখিত কারোর পরিচয় ছিলনা সেহেতু তিনি এবিএম নিজামুল হককে সঙ্গে যেতে বলেন। কিন্ত নোয়াখালী যাওয়ার খরচ তাদের কারো কাছে নাই। অগত্যা তারা ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মন্টুর দ্বারস্থ হন। প্রথমে তারা অধ্যাপক হানিফের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি সরাসরি না বলেন। তারপর তারা শহিদ উদ্দিন ইসকান্দার সাহেবের সাথে কথা বলতে যান। ইসকান্দার সাহেব তাদেরকে দুঘন্টা বসিয়ে রাখার পর বলেন তার দ্বারা এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। প্রয়োজনে তিনি টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। শেষ পর্যন্ত তারা মোস্তাফিজুর রহমানকে নোয়াখালী নিউক্লিয়াসের দায়িত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসে।
এবিএম নিজামুল হক খুবই সৃজনশীল মননের অধিকারী ছিলেন। একাত্তর সালে মার্চ মাসের অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ’ নামক এক সান্ধ্য দৈনিক প্রকাশ করতেন। এই দৈনিকে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি, বঙ্গবন্ধু তাজ উদ্দিন ও ছাত্রলীগের নির্দেশনাসহ আন্দোলনের করনীয় সহ স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের বক্তব্য প্রকাশ করা হতো। পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতো তারই রাজনৈতিক সহকর্মী শওকত হাফিজ খান রুশ্নি। পত্রিকাটি ছাপা হতো হাজারী গলির সমাচার প্রেস থেকে। ২৫ মার্চ এবিএম নিজামুল হক সহ জেলা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাব লুট করে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। ২৯ মার্চ তারা ভারতের উদ্দেশ্যে রামগড় গমন করেন এবং ভারতে প্রবেশ করেন।
এবিএম নিজামুল হক ১ নং সেক্টরের ইয়ুথ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রটিং এর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১ নং সেক্টরের আর্মি ক্যাম্পে স্টাফ অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত্রæদের চিহ্নিতকরনের নির্দেশনা প্রদান ও রাজনৈতিক সচেতন কর্মীদের মুজিব বাহিনীতে প্রেরণের দায়িত্ব পালন করেন। অক্টোবর ’৭১ চট্টগ্রাম সাব সেক্টর এফ এফ/ এম এফ নের্তৃত্বে উপ অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন যার অধিনায়ক ছিলেন ইঞ্জি. মোশারফ হোসেন ও যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী তার গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং তার মাকে গুলি করে হত্যা করে ১১ জুন ৭১ সালে শুক্রবার বিকেল ৫ টায়।
১৯৬২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন তরুণ ছাত্র নিউক্লিয়াস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পূর্ব বঙ্গকে স্বাধীন করার মানসে। তখন তাদের বয়স ছিলো ১৯ থেকে ২১ বছর। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সময় লেগেছিল ৯ বছর। ৯ বছরে তারা একটা জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিল মানসিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে। তাদের মূল নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান। তার আদর, প্রশ্রয় ও দিক নির্দেশনায় এই তরুণরা অসাধ্যকে সাধন করেছেন। বিশ্বমানচিত্র পরিবর্তন করে বাংলাদেশ নামক নতুন জাতিরাষ্ট্রের জন্ম দেন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট