একযুগেও চালু করা যায়নি এক্স-রে মেশিন

153

বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক যুগ ধরেও এক্স-রে মেশিন চালু না হওয়ায় দুর্ভোগের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা। ফলে বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকগুলো সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি টাকা। ফলে স্বল্পমূল্যের সরকারি এই সেবা বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন উপজেলাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের শেষের দিকে বিকল হয়ে পড়ে পুরাতন এক্স-রে মেশিনটি। এর ৩ বছর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের মার্চে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের ৫০০ এম এম আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয় হাসপাতালটিতে। কিন্তু টেকনিশিয়ান জটিলতার অজুহাতে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নতুন মূল্যবাদ এই এক্স-রে মেশিনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এক্স-রে মেশিন পেয়েও এর সুফল ভোগ করতে পারেননি বোয়ালখালীর জনগোষ্ঠী।
পুরনো এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট তৎকালীন এক্স-রে টেকনেশিয়ান (রেডিওগ্রাফি) মো. বাবুল মিয়াকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রেষণে নিয়ে যাওয়া হয়। বোয়ালখালীতে নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দের প্রায় ৩-৪ বছর পর প্রেষণে থাকা টেকনেশিয়ান বাবুল মিয়াকে তার কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক্স-রে টেকনেশিয়ান আবুল কালাম প্রধানসহ বোয়ালখালীতে পরপর আরো ৩-৪ জন টেকনেশিয়ানকে পদায়ন করা হয়। তারা বিভিন্ন অজুহাতে সেই বদলী ঠেকান। ফলে টেকনিশিয়ান জটিলতায় পড়ে দীর্ঘদিন চালু করা যায়নি এ মেশিন। শেষতক একজন টেকনিশিয়ান আসেন। টেকনিশিয়ান পাওয়া গেলেও সরকারের দেওয়া নতুন এক্স-রে মেশিনটি আর সাড়া দিচ্ছে না। এতে বোয়ালখালীবাসীর কপালে জুটছে না ডিজিটাল এক্স-রে সেবা। সরকারি এক্স-রে সুবিধাবঞ্চিত সেবাপ্রার্থীরা তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক থেকে নি¤œমানের এক্স-রে সেবা গ্রহণ করছেন দিগুন অর্থ খরচ করে। সেবাপ্রার্থীদের এই বঞ্চনাকে পুঁজি করে স্থানীয় এসব ক্লিনিক রিপোর্ট দেওয়ার নামে প্রতারণা করছেন গ্রাহকদের সাথে।
২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির ৪র্থ সভা চলাকালীন সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ৫ বছরেও চালু করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৫ দিনের মধ্যে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন সচল করে জনসেবায় উন্মুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ নির্দেশের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শুধুমাত্র চিঠি লিখে দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ। অসার ৫০০ এম এম ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি চালু করতে না পারায় অলস পড়ে থাকছে কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে। অন্যদিকে হাসপাতালে কর্মরত এক্স-রে টেকনিশিয়ানকে পটিয়া উপজেলায় প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সদ্য যোগদান করা বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, মূল্যবান ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি সচল নেই।
৫০ শয্যার এ হাসপাতালে এক্সরে সেবা দেওয়া গেলে অনেক রোগীর রোগ নিরুপণ সহজেই করা যেত। এতে কমে আসতো রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ। বর্তমানে এক্স-রে সেবা না থাকায় সামান্য আঘাত পাওয়া রোগীদেরও অন্যত্র স্থানান্তর করতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল।