একদিন পৃথিবীর সবাই কি চীনের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করবে?

17

চীন রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি এমন এক ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে যার নাম ডিসিইপি- এবং যাকে বলা হচ্ছে ক্রিপটোকারেন্সির জগতে নতুন শক্তির আবির্ভাব। অনেকে বলছেন, একদিন পৃথিবীর সবাই ব্যবহার করবে এই ডিসিইপি। ক্রিপটোকারেন্সি হচ্ছে এমন এক ধরণের ডিজিটাল মুদ্রা যা কেন দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকেই তৈরি করা যায়, ব্যবহারও করা যায়। বিটকয়েন নামের ডিজিটাল মুদ্রার কথা অনেকেই জানেন। এর সূচনা হয়েছিল ২০১৪ সালে পশ্চিম চীনের এক গোপন স্থান থেকে, তৈরি করেছিলেন শ্যান্ডলার গুও নামে চীনের এক উদ্যোক্তা। তার মনে হয়েছিল, বিটকয়েন একদিন পৃথিবীকে বদলে দেবে, ডলারকে হটিয়ে দিয়ে পরিণত হবে পৃখিবীর প্রধান মুদ্রায়।
বিটকয়েন তৈরির জন্য লাগে বহু কম্পিউটার, তাই এতে বিদ্যুৎও খরচ হয় প্রচুর। শ্যান্ডলার গুও এজন্য ব্যবহার করেছিলেন একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, আর এতে তার অংশীদার ছিলেন চীনা সরকারের এক স্থানীয় কর্মকর্তা।
মেশিনগুলোর ক্ষমতা ছিল পৃথিবীর সব বিটকয়েনের ৩০ শতাংশ উৎপাদন করার – যাকে বলে মাইনিং। তবে বিটকয়েন প্রস্তুতকারক শ্যান্ডলার গুও এখন নতুন এক শক্তির উত্থান দেখতে পাচ্ছেন। সেটা হচ্ছে চীনা রাষ্ট্রের তৈরি একটি ডিজিটাল মুল্য পরিশোধের ব্যবস্থা। এর নাম ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বা ডিসিইপি। বলা যায়, এটা হচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের একটি ডিজিটাল সংস্করণ।
মি গুও বলছেন, এটা সফল হবে কারণ চীনের বহু লোক এখন থাকেন চীনের বাইরে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয় ৩ কোটি ৯০ লক্ষ চীনা এখন বিদেশে বাস করেন। এই লোকদের যদি চীনের সাথে যোগাযোগ থাকে তাহলে তারা এই ডিসিইপি ব্যবহার করবে, এবং তা এই কারেন্সিকে এক আন্তর্জাতিক কারেন্সিতে পরিণত করবে। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে এটা আসলে কতটা সফল হবে এবং আরো একটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে চীন হয়তো দেশের নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে ব্যবহার করতে পারে।
বিটকয়েনের মতোই একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিসিইপি- যাকে বলে ব্লকচেইন। এটা হচ্ছে এক ধরনের ডিজিটাল হিসাবের খাতা যা লেনদেন যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। ব্লকচেইনে সেই নেটওয়ার্কে করা সব লেনদেনের রেকর্ড রাখা থাকে, আর নতুন লেনদেন যাচাই করার কাজে ব্যবহারতকারীরাও ভুমিকা রাখেন। এর অর্থ হলো, ব্যবহারকারীরা যদি একে অপরকে তাদের ফোনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে চান – তাহলে তাদের ব্যাংকের কাছে যাবার দরকার হচ্ছে না।
চীন পরিকল্পনা করছে, এ বছরের শেষ দিকেই তারা ডিসিইপি চালু করবে। কিন্তু চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও এর কোন নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। এ বছরের প্রথম দিকে চীনের বাছাই করা কিছু শহরে ডিজিটাল কারেন্সি ট্রায়াল শুরু হয়।
পুরোপুরি চালু হলে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যাংক কার্ড-এর সাথে একটা ডাউনলোড করা ইলেকট্রনিক ওয়ালেট সংযুক্ত করতে পারবেন, যা দিয়ে অর্থ লেনদেন এবং স্থানান্তর করা যাবে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন চাপের মধ্যে আছে যাতে এই ডিজিটাল কারেন্সি চালুর প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়। কারণ তারা চায়না ফেসবুকের লিব্রা বিশ্বের প্রধান ডিজিটাল কারেন্সি হয়ে উঠুক- বলছেন লিংহাও বাও, বেইজিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রিভিয়ামের বিশ্লেষক। তারা মনে করে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত অর্থব্যবস্থার চাইতেও খারাপ কিছু হবে – বলেন মি. বাও।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীন চাইছে ইউয়ানকে আর্ন্তজাতিক মুদ্রায় পরিণত করতে – যাতে তা ডলারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা এবং তা চালানোর যন্ত্রগুলো গড়ে তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন মনে করছে, অন্য কিছু দেশ যদি চীনা মুদ্রা ব্যবহার করে তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব ভাঙতে পারবে, বলেন বিটফুল নামধারী (তিনি আসল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন চীনা ক্রিপটোকারেন্সি পর্যবেক্ষক।
তিনি মনে করেন, ক্রিপটোকারেন্সিই টাকার ভবিষ্যৎ। তার মতোই আরো কিছু পর্যবেক্ষকের মতে – এই ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে চীন এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।
চীনের ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অগ্রসর বলে মনে করা হয়। দেশটি এখন ক্যাশলেস সোসাইটি অর্থাৎ নগদ অর্থের ব্যবহারবিহীন সমাজে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে। গত বছর ২০১৯ সালে চীনে প্রতি পাঁচটি লেনদেনের চারটিই হয়েছে উইচ্যাট-পে বা আলিবাবার আলিপে – ইত্যাদির মাধ্যমে।