একটি হাউসবোটে চড়ে গোটা কেরালা রাজ্য ভ্রমণ!

150

কখনও হাউসবোটে করে কেরলের ব্যাকওয়াটারে জলভ্রমণ করেছেন? যদি না করে থাকেন তবে আপনি তা করবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন। আমাদের রাজ্য যে সকল মনেরাখার মত এবং অনন্য অভিজ্ঞতাগুলি প্রদান করে সেগুলির মধ্যে সহজ একটি অভিজ্ঞতা।
বর্তমানে প্রচুর সংখ্যায় হাউসবোট রয়েছে । আরামপ্রদ ভ্রমণের জন্য ধীরে প্রবাহিত চলমান বার্জ ব্যবহৃত হয়। সেগুলি আদতে প্রাচীনকালের কেট্টুবল্লমের উন্নত সংস্করন। মুল কেট্টুবল্লমগুলি ব্যবহৃত হত টন টন ধান এবং মশলা বহন করার জন্য। একটি সাধারণ মাপের কেট্টুবল্লম কুট্টনাদ থেকে কোচি পোর্ট অবধি ৩০ টন পর্যন্ত্য মাল বহন করতে পারে।
মালায়লাম ভাষায় কেট্টু কথার অর্থ হল ‘বাড়ির কাঠামো’, ‘বল্লম’ কথার অর্থ হল নৌকা। এই নৌকোগুলিতে কাঠের কাঠামোর উপরে খড়ের ছাউনি দেওয়া থাকে। কাঠাল কাঠের তক্তা একসাথে যুক্ত করে নারকেলের দড়ি দিয়ে বেঁধে তৈরি করা হয়। তারপরে কাজুবাদামের শাঁস সিদ্ধ করে গাঢ় কালোরঙ্গের রেজিন প্রস্তুত করে তার উপরে প্রলেপ দেওয়া হয়। সাবধানে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে একটি কেট্টুবল্লম কয়েক প্রজন্ম টিঁকতে পারে।
কেট্টুবল্লমের একটি অংশ বাঁশ এবং নারকেলের দড়ি দিয়ে ছাউনি করা থাকে, মাঝিরা সেখানে রান্নাবান্না করে এবং বিশ্রাম নেয়। খাবার এর উপরেই রান্না করা হয় এবং ব্যাকওয়াটার থেকে মাছ সংগ্রহ করে রান্না করা হয়ে থাকে।
বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থাতে ট্রাক যখন পরিবহনের স্থান দখল করে নেয়, এই নৌকোগুলিকে ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করার নতুন পথ মানুষ খুঁজে নেয়। চলতি হাউসবোটগুলির মধ্যে প্রায় সবকটি ১০০ বছরেরও বেশী পুরনো। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এরমধ্যে বিশেষ ঘর নির্মাণ করে প্রায় লুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে বর্তমানে এগুলি জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
আলাপ্পুজহার ব্যাকওয়াটারে এগুলি এখন পরিচিত দৃশ্য, শুধুমাত্র আলাপ্পুজহাতেই প্রায় ৫০০ হাউসবোট রয়েছে।
কেট্টুবল্লমগুলিকে হাউসবোটে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে সাবধাণতা অবলম্বন করার জন্য শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দ্রব্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছাদের জন্য বাঁশের মাদুর, কঞ্চি এবং সুপারিগাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। নারকেলের ছোবার মাদুর এবং কাঠের পাটাতন ব্যবহৃত হয় মেঝে করার জন্য, বিছানার জন্য ব্যবহার করা হয় নারকেল গাছের কাঠ ও দড়ি। আজকাল, আলো জ্বালাবার জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
বর্তমানে, হাউসবোটগুলিকে একটি ভালো হোটেলের সমান সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য উন্নত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাজানো গোছানো শোবার ঘর, আধুনিক শৌচালয়,আরামদায়ক বৈঠক্ষানা, একটি রান্নাঘর এবং এমনকি মাছধরার জন্য একটি ব্যালকনিও রয়েছে। মাথার উপরের কাঠের বা ভাঁজ করে রাখা খেজুরপাতার বক্র ছাউনির কিছুটা অংশ খুলে রাখা হয় দৃষ্টিপথ যাতে বিঘ্নিত না হয়। বেশীরভাগ হাউসবোট, স্থানীয় মাঝিরাই দাড় টেনে বয়ে নিয়ে যায়, কিছু হাউসবোট ৪০ঐচ-র ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হয়ে থাকে। বেশীসংখ্যক পর্যটকদের জন্য দুই বা ত্তোধিক হাউসবোটকে পরপর জুড়ে হাউসবোট-ট্রেন তৈরি করা হয়ে থাকে।
হাউসবোটে ভ্রমণের আসল মজা হল, যখন আপনি এতে চড়ে আরামে ভ্রমণ করবেন সেই সময় কেরলের স্পর্শহীন অথবা অগম্য গ্রাম্য জীবনের উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য উপভোগ করতে করতে যাবেন।
হাউসবোটগুলি পাওয়া যায় তিরুবানন্তপূরম, কোল্লম, কোট্টায়ম, আলাপ্পুজহা, এরনাকুলম, থ্রিসসুর এবং কাসারগদ-এ। আরও জানার জন্য যোগাযোগ করুন ডিটিপিসি-তে।
ডিটিপিসি হাউসবোট প্রি-পেইড কাউন্টার, আলাপ্পুজহা।
হাউসবোট বুক করার জন্য ডিস্ট্রিক্ট টুরিজম প্রমোশন কাউন্সিল (ডিটিপিসি) পরিচালিত হাউসবোট প্রি-পেইড কাউন্টার ‘ট্রাস্টেড সার্ভিস, ট্রাস্টেড রেটস’- এর সহায়তা নিতে পারেন।
যোগাযোগের ঠিকানা :
আলাপ্পুজহা হাউসবোট প্রি-পেইড কাউন্টার।
মোবাইল নং: +৯১ ৯৪০০০৫১৭৯৬, +৯১ ৯৪৪৭৪৮৩৩০৮
ফোন: +৯১ ৪৭৭ ২২৫১৭৯৬, +৯১ ৪৭৭ ২২৫৩৩০৮
অগ্রিম বুকিং-এর জন্য পর্যটকরা ডিটিপিসির অ্যাকাউন্টে ভারতীয় মুদ্রায় ২৫০০/- টাকা জমা দিয়ে মেল করুন ফঃঢ়পধষচু@ুধযড়ড়.পড়স. তে।
ডিটিপিসি-র অ্যাকাউন্ট নম্বর হল অ/প ১০১৫০১০০২৫৩২০৩, ফেডেরাল ব্যাঙ্ক, মুল্লক্কল শাখা, আলাপ্পুজহা। ব্যাংক কোড নম্বর হল ঋউজখ ০০০১০১৫ ।