একটা স্বপ্নপূরণে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ফিরে এসেছি

59

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণ করতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু একটা স্বপ্নপূরণে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ফিরে এসেছি। গতকাল শনিবার দুপুরে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি, যেদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়েছি সেদিন থেকেই যে, আমি আমার মৃত্যুকে হাতে নিয়েই ফিরে এসেছি। বলতে গেলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই এসেছি। যে কোনো মুহূর্তে হয়তো আমাকে হত্যা করা হতে পারে, মারা যেতে পারি, সেটা জেনেই কিন্তু আমি এসেছি।
তিনি বলেন, কেন এসেছি, তার কারণ হচ্ছে একটি স্বপ্ন, যে স্বপ্নটা জাতির পিতা দেখেছিলেন বাংলাদেশকে ঘিরে, দেশের মানুষকে ঘিরে। যে বাংলাদেশের মানুষকে তিনি সুখী-সমৃদ্ধশালী করবেন। তাদের জীবন উন্নত করবেন। দুঃখ-দারিদ্র্যের হাত থেকে তাদের মুক্তি দেবেন। সেই চিন্তাটাই তিনি করেছিলেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ করা কর্তব্য হিসেবে আমি নিয়েছি। খবর বাংলানিউজের
দেশে ফিরে আসার পর বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সময়টুকু আমি পাবো দেশের জন্য কাজ করবো।
সত্য কথা বলতে কখনো দ্বিধা করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয়ও করি না।
দেশি ও আন্তজার্তিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে সব সময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র আমাদের সামনে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যারা আমাদের সমর্থন দেয়নি, তাদের নানা রকম চক্রান্ত থাকবে। কিন্তু সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য সব সময় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে এবং প্রস্তুতি নিতেও হবে। সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
এসএসএফের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, নানা ধরনের প্রতিকূল অবস্থা বারবার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্ত চক্রান্ত মোকাবেলা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ। এইটুকু বলবো, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এসএসএফ সব সময় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।
তিনি বলেন, এসএসএফের আনুগত্য ও উচ্চমানের পেশাদারিত্ব- এটা আমাকে গর্বিত করেছে। দক্ষ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সব সময় সমুন্নত রেখেছে।
উন্নত প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত প্রযুক্তি যেমন আমাদের উন্নয়নের যাত্রাকে আরও সুন্দর ও দ্রæত করে, একইভাবে যারা অপরাধী তাদেরও সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। সেগুলো মোকাবেলা করতে হবে। প্রযুক্তি আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন সেদিক থেকেও আমাদের সব সময় যুগোপযোগী থাকতে হবে। প্রযুক্তিকে যেন আমরা ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। আর মন্দ কাজে যারা ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি।
তিনি বলেন, এসএসএফ এর মতো একটা প্রতিষ্ঠান, তাদেরকে সব সময় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। সেইসঙ্গে যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার মতো সরঞ্জামাদিও দরকার।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যত রকমের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা রাজনৈতিক সহিংসতা আসুক না কেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিটি সংস্থা, দেশের জনগণ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এগুলো মোকাবেলা করেছে বলেই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।
দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে, যদি সততার সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা যায় তবে একটা দেশকে উন্নত করা যায়। আর সেটা আমরা এক দশকে প্রমাণ করেছি।
তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি যে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে বা পারবে। আজকে কিন্তু আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে গেছি।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা না হলে কিন্তু দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং এসএসএফ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটি পেইন্টিং ও ছবির বই তুলে দেন এসএসএফ মহাপরিচালক। পরে এসএসএফ সদস্যদের সঙ্গে ফটোসেশনের অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।