‘এই জীবনে আর কোনোদিন ইয়াবা কারবার করবো না’

73

‘এই জীবনে আর কোনোদিনও ইয়াবা কারবার করবো না; স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো। অন্যদেরও এই কারবারে না আসার অনুরোধ করবো।’ টেকনাফের নাজিরপাড়া গ্রামের মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে এনামুল হক প্রকাশ এনাম মেম্বর এ কথাগুলো বলেন, যিনি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কথা হয় এনামের সঙ্গে। অনুষ্ঠান মঞ্চের পূর্বপাশে বসে যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন পাশ থেকে একই কথা বলেন টেকনাফের লেঙ্গুরবিলের সামশু মিয়ার ছেলে মো. সিরাজ, যিনি পরে অনুষ্ঠানে আগতদের কাছে অঙ্গীকার করেন, জীবনে কোনোদিন মাদক ব্যবসা করবেন না বলে।
শুধু এনাম ও সিরাজ নয়; এদিন আত্মসমর্পণ মঞ্চে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আরও বেশ কয়েকজন ইয়াবা কারবারির। এর মধ্যে টেকনাফের দক্ষিণ কচুবনিয়া গ্রামের মৃত হাজি সুলতান আহমদের ছেলে মৌলভী বশির আহমদ বলেন,‘টাকার লোভে পড়ে এ ব্যবসায় পা দিয়েছিলাম। ভুল হয়ে গেছে, এখন বুঝতে পারছি। এ ব্যবসা আর করবো না। বউ-বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে বাঁচতে চাই। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
একই কথা বলেন টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরুল বশর; যিনি পৌরসভার কুলালপাড়া গ্রামে বাস করেন। তার বাবার নাম মো. ইউনুছ। বশর বলেন, ‘টাকার লোভে একদিকে দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি, অন্যদিকে নিজের পরিবার ও স্বজনদের কাছে থাকতে পারিনি পুলিশের ভয়ে। অশান্তি থেকে বাঁচতে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, আইনগতভাবে সেসব মামলা মোকাবিলা করবো। শুধু সমাজের অন্য ১০ জনের মতো স্বাভাবিক জীবন চাই।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে থাকা পুরনো মামলা প্রচলিত আইনে চলবে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে সুপারিশ করা হতে পারে।
তিনি আরও জানান, আত্মসমর্পণকারীদের সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারকের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক মো. দিদারুল আলম জানান, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে দুইটা মামলা হয়েছে; একটা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে, অন্যটা অবৈধ অস্ত্র আইনে।
এদিন দুপুরে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ইয়াবার কারবার থেকে আত্মসমর্পণকারীদের আয় করা সম্পদ জব্দ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। তবে তাদের মধ্যে অসচ্ছল কেউ থাকলে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন এবং দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানের নির্দেশ দেন। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে ৩ শতাধিক মাদক কারবারি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়; শুধু কক্সবাজারে টেকনাফে মারা যায় ৩৯ জন ইয়াবা কারবারি। ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদক কারবারিদের নিয়ে একটি তালিকাও প্রকাশ করে; যাতে কক্সবাজার ও টেকনাফের ১ হাজার ১৫১ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসে। এর মধ্যে ৭৩ জন শীর্ষ মাদক কারবারী বা পৃষ্ঠপোষকের নাম আছে। এ তালিকায় রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিসহ তার পরিবারের ২৬ জনের নাম।