‘এইচএসসি পাস’ প্রার্থী দুই ঘণ্টা পর স্বশিক্ষিত

177

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফটিকছড়িতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন নাজিম উদ্দিন মুহুরী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মনোনয়ন পত্রের সাথে জমা দেয়া জাতীয় পরিচয় পত্রে (এনআইডি) শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন স্নাতক। মনোনয়ন পত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এইচএসসি। মনোনয়ন পত্রের সাথে এইচএসসি পাসের সত্যায়িত সার্টিফিকেট কপিও জমা দিয়েছেন। যা মূল কপি দেখাতে পারেননি তিনি। পরে নিজে স্বশিক্ষিত দাবি করে নতুন হলফনামা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী। এমন মিথ্যা তথ্য দিলেও প্রার্থিতা বাতিল করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই-বাছাইকালে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় বিষয়টি ধরা পড়ে। এসময় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে দুই ঘন্টার সময় বেঁধে দেন। পরে বিকাল ৪টার দিকে সম্পূরক হলফনামা জমা দিয়ে বৈধ হয়েছেন নাজিম উদ্দিন মুহুরী। তবে এমন বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব পূর্বদেশকে বলেন, ‘উনি আগে হলফনামায় যে শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েছেন তার মূল সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে পারে নাই। উনি বলছেন এটা ভুল হয়েছে। এখন আরেকটা হলফনামা পরিবর্তন করে দিয়েছে যে স্বশিক্ষিত। রিটার্নিং কর্মকর্তার যুক্তি হলো উনি এডভোকেটের সামনে দাঁড়িয়ে ভুল স্বীকার করেছেন। অথচ আগের ভুলটাও এডভোকেটের সামনে দাঁড়িয়ে করেছেন। এ বিষয়ে আমি কালকে (আজ) আপিল করবো।’
মিথ্য তথ্য দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘সব মিথ্যা কথা। এটা ভুলবশত কি হয়েছে আমি জানি না। এটা আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ঠিক করার পর আপনার সাথে কথা বলবো। হলফনামায় ভুল হয়েছে।’
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরী হলফনামায় যে সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি জমা দিয়েছেন সেটি ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষের। এতে এইচএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডে মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী হিসেবে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন নাজিম উদ্দিন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ সার্টিফিকেট কপিটি সত্যায়িত করেছেন ফটিকছড়ি ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সুমেন চাকমা।
জাল সার্টিফিকেট কপি সত্যায়িত করার বিষয়ে ফটিকছড়ি প্রাণীসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সুমেন চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘মূল সার্টিফিকেটের কপি একটা নিয়ে আসছিল সে অনুযায়ী আমি করে দিয়েছি। যেটা আনছিল সেটি মূল ছিল কিনা আমি জানি না। লোকজন আসে, আমি সত্যায়িত করে দিই। উনারা যখন নিয়ে আসে তখন অফিসে ব্যস্ত ছিলাম আমি। আমি বলেছিলাম, এখন পারবো না। পরে এরা ঝামেলা করেছে।’ সম্পূরক হলফনামা জমা দিয়ে নাজিম উদ্দিন মুহুরীর মনোনয়ন পত্র বৈধ হলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় তথ্য গোপন করলে মনোনয়ন পত্র বাতিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় হলফনামা দাখিল না করলে বা দাখিলকৃত হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করা হলে বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করলে বা হলফনামায় উল্লিখিত কোন তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট দাখিল না করলে রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন পত্র বাতিল করতে পারবেন। হলফনামায় প্রদত্ত কোন তথ্য মিথ্যা বা ভুল বলে প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘ ফটিকছড়ির একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী এইচএসসি পাস বলে হলফনামা দিয়েছিলেন। উনি আবার নিজেই তা ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। আমরা দুই ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। পরে উনি সম্পূরক হলফনামা জমা দিয়েছেন। এখন আগেরটির সাথে এটিও থাকবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু জমা নিয়েছি। এখন অন্য কোন প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল করলে সেখানে যে সিদ্ধান্ত আসবে আমি তাই মেনে নিব।’
প্রসঙ্গত, ফটিকছড়িতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন মুহুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) হোসাইন মো. আবু তৈয়ব ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবছার উদ্দিন।