ঊর্ধ্বমুখি নিত্যপণ্যের দাম সরকারের তদারকী জোরদার করতে হবে

27

হঠাৎ নিত্যপণ্যের বাজার আবারও ঊর্ধ্বমুখি। বিশেষকরে পেঁয়াজের বাজার ক্রমান্বয়ে ঝাঁজ ছড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি আছে শাক-সবজির বাজার। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, বাজারে দেশি ও আমদানিকৃত বিদেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫২ এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দাম বৃদ্ধির পেছনে একটি আশঙ্কা কাজ করছে। গত বছর পেঁয়াজের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছিল। কেজিপ্রতি ২৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসাদন পণ্যটি। আবারও এর দাম বাড়িয়ে সরকার ও জনগণকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস চলাতে পারে, এমন আশঙ্কা অস্বাভাবিক নয়। কারণ আমরা যতটুকু জানি, গত মৌসুমে ওঠা পেঁয়াজ এখন শেষের দিকে এবং নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও কিছু সময় লাগবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ ব্যবহার করে আর যেন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি করতে না পারে-সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। কেবল পেঁয়াজের দামই নয়, প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি, কাঁচামরিচ ইত্যাদির দামও বেড়েছে। চালের দামেও এক ধরনের কারসাজি লক্ষ করা যাচ্ছে। কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সাধারণ মানের চাল। করোনাকালীন খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে সরকারের চালের দরকার হবে বেশি- এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের উদ্যোগ নিলেও চালকল মালিকরা চাল সরবরাহে এগিয়ে আসেননি-এমনটি অভিযোগ রয়েছে। তবে সরকার এখনও চাল সংগ্রহ করে চলছে। এরপরও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, মৌসুম শেষ না হলেও এবার সরকার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া চাল আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত খাদ্য অধিদফতরের বিভিন্ন সিদ্ধান্তও চালের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে-এমন ধারণা সাধারণ ব্যবসায়ীদের। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। চালের মতো একই কথা প্রযোজ্য শাক-সবজির ক্ষেত্রেও। চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় প্রতিটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গড়ে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকার নিচে সবজি বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি কাচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ২শ’টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর টমেটো ১২০-১৪০টাকা পর্যন্ত। সেই হিসাবে মাছ-মাংস ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলই বলা যায়। অনেক ক্ষেত্রে সবজির দামের চেয়ে মুরগির দাম কমই বলা যায়। বর্তমান বাজারে ব্রয়লার মরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বাজারের পাইকারি বা খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সাধারণ কৃষক তার সুবিধা ভোগ করতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে কৃষক তার উৎপাদন খরচও তুলতে পারে না। এ বিষয়টি বারবার সরকারের নজরে আনা হলেও ফলপ্রসু কোন উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান হয়নি। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, বাজারে নিত্যপণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা, মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো, সর্বোপরি বাজার মনিটরিংয়ে জোর দেয়ার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে চাল ও সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপ বেশি পড়ে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের ওপর। করোনা এমনিতেই তাদের নাকাল করে রেখেছে। এর উপর বাজার দরের ঊর্ধ্বমুখিতা সমাজের এই শ্রেণির মানুষগুলোর দুর্ভোগই বাড়ে। আমরা আশাকরি, সরকার সময় থাকতে বাজার দরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবে।