উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন

69

উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রচুর জনসমাগম ঘটে। বেলা একটার পর থেকে নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় সৈকত। নগরীর বিভিন্ন এলাকার দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আনা হয় পতেঙ্গা সৈকতে। সাগরের ঢেউয়ের গর্জন ছাপিয়ে ভক্তকণ্ঠের নানা স্লোগানে চলে প্রতিমা বিসর্জন। এ সময় ভক্তদের কারও কারও চোখে জল ছলছল করে। কেউ শেষবারের মতো প্রণাম করেন। কেউ দুর্গামায়ের চরণে, হাতে গুঁজে দিচ্ছেন চিরকুট। কেউ আবার মহাযজ্ঞের ভিড় এড়িয়ে দূর থেকে এক মনে প্রার্থনা করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের পতেঙ্গা সৈকতের দৃশ্যটা এমনই ছিলো। বেলা দুইটার পর থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। ঠেলাগাড়ি, রিকশাভ্যান, ট্রাক, পিকআপে করে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমার মিছিল আসতে থাকে পতেঙ্গা অভিমুখে। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, আর পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় করেছেন লাখো ভক্ত অনুরাগী। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের নানা শ্রেণি ও বর্ণের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। ঢাকঢোলের তালে নেচেগেয়ে দুর্গতিনাশিনী দুর্গাকে বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দেবী আবার জগতের কল্যাণে ফিরে আসবেন, এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ বছরের শারদীয় উৎসব।
সকাল থেকে নগরের মন্ডপে মন্ডপে বাজে বিদায়ী সুর। ষোড়শ উপাচারে দশমীর বিহিত পূজা, দর্পন বিসর্জন, শাস্ত্রীয় আচার, দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন, দেশ-জাতি, ব্যক্তিগত ও পরিবারের সুখ, শান্তি, মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত ছিলেন পূজার্থীরা।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার বলেন, এবার নগরে ২৭০টি মÐপে পূজা হয়েছে। এর মধ্যে পতেঙ্গা সৈকতে ১২০-১৩০টি প্রতিমা বিসর্জন হয়। এর বাইরে ফিরিঙ্গিবাজারের অভয়মিত্র ঘাটে, কাট্টলী সৈকতে, পাহাড়তলীর বিভিন্ন পুকুর-দীঘিতে, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন হয় ।
এদিকে সুন্দর ও শান্তি-শৃঙ্খলার সাথে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চসিক কর্তৃপক্ষ মঞ্চ নির্মাণ, আলোকসজ্জা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পানীয় জলসহ মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা করেছে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকত ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিমা নিরঞ্জন নির্বিঘ্ন করতে একটি অস্থায়ী পুলিশ কনট্রোল রুম চালু করা হয়েছে সৈকতে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। র‌্যাবের টহল, নিয়মিত পুলিশ, নারী পুলিশ সদস্য, টুরিস্ট পুলিশসহ সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিমসহ ডুবুরিরাও।