উপমহাদেশে স্থিতিশীলতা রক্ষায় সার্ককে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে

43

গত দুই সপ্তাহ আগে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা চৌকিতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জেহাদি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ কর্তৃক অতর্কিত হামলায় ভারতের বেশ কয়েকজন সেনা অফিসারের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চলছিল। এঘটনায় ভারতের ক্ষোভ ও পাকিস্তানের প্রতি জঙ্গি লালনের অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা হলেও পাকিস্তান বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছিল। কিন্তু ভারত তাদের সেনা অফিসারের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্টমন্ত্রী ও সেনা প্রধানের বক্তব্যে তা স্পষ্ট করা হয়। পাকিস্তানের পাল্টা হুমকি-ধমকির মধ্যেই ভারত মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের আকাশ সীমা অতিক্রম করে দেশটির ভিতরে বালাকোটের খাইবার পাকতুন এলাকায় গিয়ে বিমান হামলা করে ভারতের ভাষায় জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা ও হিজবুল মুজাহিদিনের অবস্থান লক্ষ্য করে এক হাজার কেজি বোমা নিক্ষেপ করেছে। এ হামলার পর ভারত দাবি করেছে এ বিমান হামলায় লস্কর-ই-তৈয়বার ৩শ জঙ্গি নিহত হয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তান তাদের আকাশ সীমা লঙ্গনের প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে বলেছে পাকিস্তান ভারতের বিমানকে তাড়া করলে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ভারত পাকিস্তানের খোলা মাঠে বিমান থেকে কয়েকটি বোমা ফেলেছে। প্রকৃতপক্ষে ভারতের এ হামলায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে নি। একইসাথে পাকিস্তান বলেছে তারা সময়মতো এই হামলার জবাব দেবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, ভারতের বারোটি যুদ্ধ বিমান এ অভিযানে অংশ নেয়। একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের আটচল্লিশ বছর পর এই প্রথম পাকিস্তানের আকাশ-সীমার ভেতর ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান পরস্পরের মুখোমুখি হল। বছর কুড়ি আগে কার্গিলের ভারত-পাকিস্তানের সৈন্যরা পরস্পর মুখোমুখী হলেও কেউ কারো আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেনি। গভীর রাতে বিনা ঘোষণায় ভারতের পাকিস্তানের আকাশ সীমা লঙ্ঘন ও হামলায় বিভ্রত সার্কভুক্ত দেশসমূহসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জানা যায়, সার্কের মহাপরিচালক ভারতের হাই কমিশনারকে তলব করে পাকিস্তানে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। উপমহাদেশসহ সার্কভুক্ত দেশসমূহে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উভয় দেশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশি দেশের উত্তেজনায় বল প্রয়োগ না করে পরস্পর আলোচনা ও ধৈর্যের সাথে তা সমাধান করার আহবান জানিয়েছে। আমরাও মনে করি, কাশ্মীরে যে ঘটনা ঘটেছে বা ঘটে আসছে তার একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন । তবে তা কোনভাবেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে নয়। এর জন্য দুই দেশের মধ্যে পরস্পর আলোচনা, ধৈর্য ও সহনশীল মনোভাব প্রয়োজন। আমরা জানি আর কয়েকমাস পরেই ভারতে জাতীয় নির্বাচন। সম্প্রতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বিরোধী জোট একাট্টা হয়েছে। মাসাধিককাল আগে অনুষ্ঠিত কয়েকটি প্রদেশে ক্ষমতাসীনরা তাদের আসন হারিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিশাল জোট বেঁধেছে অপরদিকে পাকিস্তানের ইমরান খানের নতুন সরকারও বিরোধী দলগুলোর নানা চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশ দুটি পরস্পরের বিরুদ্ধে যে কামান দাগাতে যাচ্ছে-তা আসলে দুই দেশের সংকটের কারণে নাকি তাদের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির ফায়দা উঠানোর ফন্দি! তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে বিশ্লেষণের দাবানল জ্বলছে। যাই হোক, আমরা মনে করি, এ যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব উপমহাদেশের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশি বন্ধুপ্রতিম দেশ। নানাভাবে ভারতের সাথে রয়েছে আমাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এ উত্তেজনা যদি আরো মন্দের দিকে যায়, তবে এর কিছুটা নেতিবচক প্রভাব বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের দেশসমুহেও পড়বে-তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা এখনই এ যুদ্ধাবস্থার অবসান চাই। আশাকরি, বাংলাদেশ সরকারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ উত্তেজনা প্রশমনে আন্তরিক ভ‚মিকা রাখবে।