উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

54

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনের জোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রার্থী বাছাইয়েও জাতীয় নির্বাচনের মতো কড়াকড়ি আরোপ করেছে দলটি। তৃণমূলের পাঠানো তালিকার সাথে বিভিন্ন সংস্থার জরিপে এগিয়ে থাকা প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়দের মনোনয়ন থেকে দূরে রেখে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া প্রার্থীদের গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘আমলনামা’ সংগ্রহ শুরু করেছে দলীয় হাইকমান্ড ও বিভিন্ন সংস্থা।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে তৃণমূলে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা করে একক বা সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার সব উপজেলার প্রার্থীর তালিকা একীভূত করে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠাতে জেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্রের পাঠানো চিঠি হাতে পেয়েছি। চিঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রত্যেকটির জন্য একক অথবা সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এ তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। উপজেলা থেকে তালিকা পেলেই আমরা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবো।’
উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার জরিপ প্রতিবেদন এবং জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রেরিত তালিকার সাথে সমন্বয় করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলীয় হাইকমান্ড। প্রার্থী ঘোষণার মাপকাঠি নির্ধারণে আগামী ২৬ জানুয়ারি (শনিবার) গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।
সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে দায়িত্বশীল সংস্থা ও দলীয় হাইকমান্ড। এসব তথ্যের মধ্যে প্রার্থীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশার পাশাপাশি বর্তমান ও অতীত রাজনৈতিক পরিচয় চাওয়া হচ্ছে। প্রার্থীর মামলাথাকলে সে সম্পর্কিত তথ্য এবং দলীয় গ্রুপিংয়ে জড়িত কিনা, অতীতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে বর্তমান মূল্যায়ন, রাজনৈতিক জীবনে প্রার্থীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, সততা ও নৈতিকতার দিক থেকে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এদিকে আগামী মার্চ থেকে কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীরা জোর লবিং-তদবির শুরু করেছে। প্রার্থী হিসেবে নজরে আসতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের দুয়ারে ছুটছেন। সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সাথে দূরত্ব থাকলেও জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকেই তা কাটিয়ে উঠেছেন। উপজেলায় নিজের অবস্থান তুলে ধরতে দলীয় সভা-সমাবেশগুলোতেও সরব উপস্থিতি সম্ভাব্য প্রার্থীদের। তবে একের অধিক প্রার্থী নিয়ে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। অনেকেই দল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, যোগ্য লোকদেরই দলের মনোনয়ন দেয়া হবে। তৃণমূলে দলের জন্য নিবেদিত ও যোগ্য প্রার্থীদের জায়গা দিতে সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়দের প্রার্থী করা হবে না।