উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফার তফসিল আজ

26

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ডামাডোল। নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৫ ধাপের এই নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফসিল আজ রবিবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
নির্বাচন উপযোগী ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ৫ বিভাগের শতাধিক উপজেলায় ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিএনপি এই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলীয় প্রতীকের বিধান যুক্ত হওয়ার পর এটাই হবে ব্যাপক আকারের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য রবিবার বিকালে কমিশনের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এই সভার এজেন্ডায় দুটি বিষয় রাখা হয়েছে। এক. একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন এবং দুই. পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সংক্রান্ত। এ বৈঠকে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা ছাড়াও অন্যান্য ধাপের তফসিলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ ছাড়া রবিবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হবে। জানা গেছে, নির্ধারিত দুই এজেন্ডার বাইরে রবিবারের সভায় নবগঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন আগামী ৮ বা ৯ মার্চ প্রথম দফায় ভোটগ্রহণের কথা বললেও এটি ১০ মার্চ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, যেসব উপজেলা পরিষদের প্রথম সভা ২০১৪ সালের ২২ মার্চ অথবা তার আগে হয়েছে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২১ মার্চের মধ্যে যেসব উপজেলা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে-সেগুলোতে প্রথম ধাপে ভোট হবে। এভাবে সভা অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপ, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপ, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপ এবং রোজার পরে পঞ্চম ধাপের ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত হওয়ার পর এবারই ব্যাপক আকারে এই ভোট হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালের শেষদিকে উপজেলা পরিষদ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের বিধান চালু হলে গত ৩ বছরে নবগঠিত কয়েকটি উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন ও পরিষদের উপনির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকে হয়েছে।
আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কেবল শীর্ষ পদটি দলীয় প্রতীককে অনুষ্ঠিত হলেও উপজেলা পরিষদের সবগুলো পদেই দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নে ভোট হবে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান-এ তিন পদে যেকোনও নিবন্ধিত দল প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে।
দলগুলোর থেকে তিনটি পদেই মনোনয়নের সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এক্ষেত্রে প্রতি উপজেলা থেকে তিনজনের প্যানেল করে কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন দেওয়ার বিধান থাকলেও আওয়ামী লীগ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটি উন্মুক্ত রাখবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি ও তাদের মিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে বর্তমান কমিশনের অধীনে কোনো ভোট করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য তাদের কেউ নিজ উদ্যোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে কেন্দ্রীয়ভাবে আটকানো হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করলেও উপজেলা পরিষদে এককভাবে ভোট করবে আওয়ামী লীগ।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেশের জেলাগুলোর সদর উপজেলার প্রত্যেকটিতে পরিপূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই লক্ষ্যে কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে। ভেটিংয়ের জন্য রবিবার এই বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল বিষয়ে কমিশন সভা আহবান করা হয়েছে। নির্বাচন উপযোগী উপজেলাগুলোতে তারা ৫ ধাপে ভোট করবে। রবিবার প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ধাপের ভোট কত তারিখে হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের বৈঠকের কার্যপত্রে প্রথম ধাপে ১১০টির মতো উপজেলায় ১০ মার্চ ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে ডজন খানেকে ইভিএম ব্যবহারের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮০টিতে এবার ভোট হবে। এছাড়া মেয়াদ শেষ না হওয়ায় ভোটের উপযুক্ত না হওয়া ও মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ১২টি উপজেলায় এ বছর ভোট হবে না।
উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী কোনও পরিষদের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভা থেকে মেয়াদের হিসাব শুরু হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। ওই বছর ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই বছরও ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। ২০০৯ সালে দেশে তৃতীয়বারের মতো ৪৭৫টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ছয় ধাপে দেশের ৪৮৭টি উপজেলায় এই ভোট হয়।